ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

সংসারের চাকা ঘুরছে কুড়ানো ভাঙারিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাটুরিয়া,মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

সংসারের চাকা ঘুরছে কুড়ানো ভাঙারিতে

ছবি: জনকণ্ঠ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন শামীম মিয়া (৬৫) ও তার স্ত্রী খুশি বেগম (৫৫)। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলাধীন ভাদগ্রাম এলাকায়।

কর্মের প্রয়োজনে বেঁচে থাকার তাগিদে তারা গত কয়েক বছর ধরে সাটুরিয়ায় বসবাস করছেন।  প্রতিদিনই ভাঙারি কুড়িয়ে জীবনের চাকা ঘোরাচ্ছেন তারা। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এই দম্পতির জীবনে বড় বেদনা তাদের সন্তানেরা তাদের খুঁজ খবর রাখেনা। বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধ এড়িয়ে চলে সন্তানেরা ।

সংসারের চাকা ঘোরাতে প্রতিদিনই লড়াই করতে হয় তাদের। শামীম মিয়া ও খুশি বেগম প্রতিদিন ভোরে ঘর থেকে বের হন। রাস্তাঘাট, ডাস্টবিন, এবং ফাঁকা জায়গা থেকে তারা পুরোনো প্লাস্টিক, লোহা, বোতল, কাগজ সংগ্রহ করেন। এগুলো বিক্রি করে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। এই সামান্য উপার্জন দিয়েই তারা সংসার চালান।

শামীম মিয়া বলেন, যা কিছু আয় করি সৎ পথে করি। আমাদের বয়স হয়েছে, কাজ করতে কষ্ট হয়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নেই, তাই কষ্ট হলেও চালিয়ে যেতে হচ্ছে।তিনি আরো বলেন তার তিন সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে।বড় ছেলে গার্মেন্টসে কাজ করেন। মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে গেছেন। ছোট ছেলেও নিজের মতো জীবনযাপন করছে। কিন্তু কেউই বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না।

খুশি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করতে হয়। শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। যদি আমাদের কেউ থাকত পাশে, হয়তো একটু সহজ হতো।আমরা দিনরাত কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি অথচ সন্তানেরা আমাদের চিনতেও চায় না।

সাটুরিয়া বাজারের ভাংগারি ব্যবসায়ী রাধু সাহা বলেন,ওরা যেভাবে পরিশ্রম করে, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু সন্তানদের এমন অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।

শামীম মিয়া ও খুশি বেগমের কাজ শুধু তাদের জীবিকা নয়, পরিবেশ রক্ষাতেও ভূমিকা রাখছে। তারা শহরের রাস্তা ও পরিবেশ থেকে অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করেন, যা পুনর্ব্যবহারযোগ্য।এ ছাড়াও পরিবেশপ্রেমীরা বলছেন, তাদের এই কাজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক।

তারা আক্ষেপ করে বলেন আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কোনো সরকারি সহায়তা বা প্রকল্প নেই।আমাদের মতো মানুষের জন্য যদি কোনো ভাতার ব্যবস্থা থাকত, তাহলে হয়তো এত কষ্ট করতে হতো না।

শামীম মিয়া ও খুশি বেগমের এই গল্প সমাজের এক করুণ চিত্র। সন্তানদের অবহেলা এবং অর্থনৈতিক সংকটে তারা বেঁচে আছেন নিজেরাই নিজের দায়িত্ব নিয়ে। তাদের এই সংগ্রামী জীবন আমাদের শেখায়, কঠোর পরিশ্রম এবং সৎ পথে থাকলে বেঁচে থাকা সম্ভব।

নাহিদা

×