ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

অনুমোদনহীন হাসপাতালে সিজার, নবজাতকের মর্মান্তিক মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, শিবালয় মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ১২:১২, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

অনুমোদনহীন হাসপাতালে সিজার, নবজাতকের মর্মান্তিক মৃত্যু

ছবিঃ সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ‘ইছামতী জেনারেল হাসপাতাল’ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রসূতি অস্ত্রোপচারের পর নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত নবজাতকের পিতার দাবি-চিকিৎসকের ভুলে তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারী শিবালয় মডেল ইউপির অন্বয়পুর গ্রামের ফরিদুর রহমান ৩৭ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে (৩০) নিয়ে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনী চিকিৎসকের কাছে যান। সেখানে চিকিৎসক রোগীর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উল্টো দিকে ‘ইছামতী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।  অনুমোদনহীন এ হাসপাতালে প্রসুতির আল্ট্রাসনোগ্রাফি, রক্ত ও ডায়াবেটিক পরীক্ষা করা হয়। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে বাচ্চার ওজন দেখানো হয় দুই কেজি ৯০০ গ্রাম আর ডায়াবেটিক সাড়ে ৭।
এমন রিপোর্ট প্রাপ্তির পর চিকিৎসক রোগীকে ভর্তির পরামর্শ দিলে সেখানে তাকে ভর্তি করা হয়। রোগীর ডায়াবেটিক থাকায় স্বজনরা জেলা শহরের কোন একটি হাসপাতালে সিজারের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মোঃ মমিনূল ইসলামের পীড়াপীড়ীতে সেখানেই সিজারে রাজি হন তারা।

ফরিদুর রহমান জানান, ১৫ জানুয়ারী বুধবার বেলা একটার দিকে রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নেওয়ার ২০-২৫ মিনিট পর তাকে ওটি থেকে বের করা হয়।
সিজারের পর বাচ্চা কোনো শব্দ না করে খিঁচুনি দিতে থাকায় অক্সিজেন দেওয়া হয়। আমরা বাচ্চাকে অন্যত্র নিতে চাইলে চিকিৎসক মমিনূল বারবার আমাদের আস্বস্থ করে বলেন, আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি, বাচ্চার কিছু হবে না। প্রায় তিন ঘন্টা পর আমরা নিজেরাই এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বাচ্চাকে নিয়ে প্রথমে মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেখান থেকে ফিরোজা জেনারেল হাসপাতাল হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে যাই। শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, বাচ্চার আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে, শিশু হাসপাতালে আইসিইউ সিট খালি নেই। সেখান থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে দৈনিক ২২ হাজার টাকা চুক্তিতে আইসিইউ সিট ঠিক হওয়ার আগেই আমার বাচ্চা মারা যায়। 
রোগীর পরীক্ষা-নিরিক্ষার কাগজপত্র ঘেটে দেখা যায়, আল্ট্রাসনোগাফিতে বাচ্চার ওজন দেখানো হয়েছে দুই কেজি ৯০০ গ্রাম কিন্তু সিজারের পর বাচ্চার ওজন ছিল ৫ কেজি ১০০ গ্রাম। 
এদিকে, নবজাতকের মৃত্যুর পর প্রসূতি সোনিয়ারও শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো কোন হাসপাতালে রেফার্ড করার অনুরোধ জানান স্বজরা। স্বজনদের অনুরোধ উপেক্ষা করে ইছামতী জেনারেল হাসপাতালেই তাকে চিকিৎসা দিতে থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 
রোগীর স্বজনেরা জোরপূর্বক তাকে সেখান থেকে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইছামতী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর রাখেন। প্রসূতি সোনিয়া আক্তার বর্তমানে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

বিষয়টি নিয়ে ইছামতী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মুমিনূল ইসলাম বলেন,  নবজাতক আধা ঘণ্টার মতো ভালো ছিল, এরপর শরীরের রং নীল হয়ে যায়। পরে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হলে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখান থেকে চিকিৎসক ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঠান। সেখানেই শিশুটি মারা যায়। এরপর প্রসূতি সোনিয়া আক্তারের শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা এখান থেকে চলে যেতে চাইলে একটি কাগজে তাদের স্বাক্ষর রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের অনেক ত্রুটি রয়েছে।  জনবল ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামেরও ঘাটতি রয়েছে৷ 

এ বিষয়ে প্রসূতি সার্জন ডা. সালমা বলেন, সাধারণত অপারেশনের পর বাচ্চা ও মায়ের অবস্থা ভালো থাকলে আমরা চলে আসি। ওই ঘটনায়ও বাচ্চা ও মা ভালো ছিল। এজন্য অপারেশন শেষ করেই আমি চলে এসেছি। বাচ্চাটার গ্রোথ একটি বেশি ছিল, অনেকটা অ্যাবনরমাল।

বিষয়টি নিয়ে ইছামতী জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মো. আবু দাউদের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেক বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর সাংবাদিক পরিচয় দেন। হাসপাতালের বৈধ কাগজপত্র, জনবল ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তড়িঘরি করে হাসপাতালের লাইট ও দরজা বন্ধ করে দ্রুত সটকে পড়েন।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ড. মকছেদুল মোমিন বলেন, নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় কেউ অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর হাসপাতালের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে খোজঁখবর নেয়া হবে।

জাফরান

×