ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১

উপজেলার প্রায় ১৪০০ গাছি রস উৎপাদন করেন

চৌগাছায় তিনদিনব্যাপী খেজুর গুড়ের মেলা

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ০০:২৯, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

চৌগাছায় তিনদিনব্যাপী  খেজুর গুড়ের মেলা

.

খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষায়যশোর জেলার চৌগাছায় ৩য় খেজুর গুড়ের মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার সকালে যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম মেলার উদ্বোধন করেন।

যশোরের যশ, খেজুরের রস’ ‘স্বাদে সেরা গন্ধে ভরা, খেজুর গুড়ে মনোহরা ঐতিহ্য ধারণ করে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় গাছিদের নিয়ে ১৫ জানুয়ারি বুধবার থেকে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার পর্যন্ত উপজেলা চত্বরে তিন দিনব্যাপী এই গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি শেলী। বিশেষ অতিথি থাকবেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার। ২০২৩ সালের ১৬ ১৭ জানুয়ারি উপজেলায় দেশের প্রথমবারের মতো খেজুর গুড়ের মেলা আয়োজন করে চৌগাছা উপজেলা প্রশাসন। 

প্রতি বছরের মতো এবারের মেলায়ও খেজুরগুড় নিয়ে বিশেষ গম্ভীরার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এবার মেলার ২য় দিন বৃহস্পতিবার রয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠিখেলার বিশেষ আয়োজন।

মেলার প্রথম দিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২০৪ জন গাছি তাদের উৎপাদিত ঝোল গুড়, দানা গুড়, পাটালী, বাদাম পাটালি, তিলে পাটালি নিয়ে অংশ নেন। ছাড়া স্কাউটস সদস্যদের উদ্যোগে মেলার মাঠে রস ¦াল দিয়ে গুড় তৈরি করা ছাড়াও নারী উদ্যোক্তারা গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পিঠার স্টল দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন আশা করছে মেলা থেকে তিনদিনে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ গুড় বিক্রি করতে পারবেন গাছিরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, যশোরের জিআই পণ্য খেজুর রসের গুড় জাতীয় অর্থনীতির একটি সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠতে পারে। খেজুর গাছ প্রস্তুত থেকে শুরু করে রস সংগ্রহ গুড় পাটালি তৈরির কাজে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা গেলে কাজটি আরও সহজ হবে। গাছ প্রস্তুত থেকে গুড় তৈরি পর্যন্ত যে ধাপগুলো রয়েছে তা যশোরের ঐতিহ্যবাহী প্রসিদ্ধ একটি শিল্প। যশোরের জিআই পণ্যের এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষার বিকল্প নেই। গাছের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উপজেলার সকল রাস্তা, নদীর ধার খাস জমিতে খেজুর গাছ রোপণের প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রতিবছর খেজুর গাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে। এই চারাগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এই উপজেলার মানুষের।

তিনি আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারলে এই পেশা কষ্টসাধ্য হবে না। গাছ প্রস্তুত রস সংগ্রহের কাজ সহজ হলে চাষিরা এই পেশা থেকে সরে যাবেন না বরং অন্যরা আগ্রহী হবেন। খাঁটি গুড় তৈরি করতে পারলে দেশ-বিদেশে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে যারা এই পেশায় জড়িত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে বৈশাখী মঞ্চে অনুষ্ঠিত গুড় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান, যশোরের সহকারী কমিশনার আব্দুল আহাদ, চৌগাছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান, চৌগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম সালাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির মাওলানা গোলাম মোরশেদ, যশোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন। সময় উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংবাদকর্মী, রাজনীতিবিদ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ গাছিরা উপস্থিত ছিলেন।

মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল রস জ্বালানোর পাত্র তাপাল থেকে খেজুর গাছের পাতা দিয়ে গরম-গরম গুড় খাওয়া গুড় খেতে গিয়ে আগত দর্শনার্থীরা নস্টালজিয়ায় ডুবে যান। গুড় খেতে খেতে অনেকে বলেন, সেই শৈশবে আর কৈশোরের দিনগুলোতে জালই (মাটির তৈরী পাত্র) আর তাপাল (টিনের তৈরি পাত্র) থেকে খেজুর পাতা দিয়ে গরম- গরম গুড় খেয়েছি আর এখন চৌগাছার গুড় মেলায় এসে গরম গুড়ের স্বাদ নিতে পারছি।

মেলায় ৯৩ কেজি গুড় নিয়ে আসেন হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরুপপুর গ্রামের গাছি আব্দুল কুদ্দুস। আব্দুল কুদ্দুসের রয়েছে ৫০৩টি খেজুর গাছ। তিনি বলেন, ৩টি মেলায়ই আমি অংশগ্রহণ করেছি। মেলার তিনদিনে অন্তত মণ (২৪০ কেজি) গুড় বিক্রির আশা করছি।

ছাড়া মেলায় গত বছরের শ্রেষ্ঠ গাছি পুরস্কার পাওয়া আব্দুল গাজী এসেছেন। তিনি বলেন, আমি ৯০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। দিয়েই আমার সারা বছরের সংসার চলে যায়। তিনি আশা করছেন বছরেও তিনি শ্রেষ্ঠ গাছি হবেন।

মেলায় আসা উদ্যোক্তা আতাউর রহমান বলেন, আমাদের চৌগাছা তথা যশোরের গুড়ের সারাদেশের সঙ্গে বহির্বিশে^ চাহিদা বেশি। এজন্য আমাদের এখানকার গুড়ের দামও বেশি। তিনি বলেন, খেজুর গুড়ের মেলা শুরু হওয়ার পর এই চাহিদা আরও বেড়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, উপজেলায় রস উৎপাদনের মতো খেজুর গাছ রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার। যা থেকে উপজেলার প্রায় ১৪০০ গাছি রস উৎপাদন করে থাকেন। দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে চৌগাছার খেজুর গুড়ের স্বাদ বেশি হওয়ায় এর চাহিদা বেশি বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, মেলার তিনদিনে গাছিরা ৫০০ থেকে ৬০০ মণ গুড় বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছি। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন সবসময়ই গাছিদের পাশে ছিল আগামীতেও থাকবে।

×