নাটোরে ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট’(বিএসআরআই) উদ্ভাবিত বিসআরআই-৪৬ জাতের আখের আবাদ করে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য। অধিক ফলন, চিনিধারণ সম্পন্ন ও রোগ বালাই মুক্ত বীজের মাধ্যমে কৃষকরা অন্যান্য জাতের আখের চেয়ে বেশী ফলন পাচ্ছেন। প্রতি বিঘায় ৪৫০ মন থেকে ৬০০ মণ পর্র্যন্ত আখ উৎপাদন হওয়ায় ফিরছে কৃষকের ভাগ্য। ফলে কৃষকরা ৪৬ জাতের আখ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পরীক্ষামূলকভাবে নাটোর চিনিকল এলাকায় ১০৫টি প্লটে কৃষকেরা ৪৬ জাতের আখের চাষাবাদ করেছেন। প্রতিটি চাষী বিঘা প্রতি ৪৫০ থেকে ৬০০ মণ পর্র্যন্ত আখের ফলন পাচ্ছেন। যা অন্যান্য জাতের আখের চেয়ে বিঘা প্রতি ২১০ মণ থেকে ৩৫০ পর্যন্ত বেশী। বর্তমানে ৪৬ জাতের আখের চাষ সম্প্রসারনে বীজ সার ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে বিএসআইআর।
বিএসআরআই সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকদের জীবনমান, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং চিনির ঘাটতি দূরীকরণে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ‘কৃষক পর্যায়ে আখের রোগমুক্ত পরিছন্ন বীজ ও বিস্তার’ শীর্ষক প্রকল্পের যাত্রা শুরু করে ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট। ২৪-২৫ অর্থ বছরে ৭টি সুগার মিল জোন ও নন মিল জোন এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া, দেশের ৩১ টি জেলার ৭০ টি উপজেলায় এই প্রকল্পের কাজ চলমান। দেশে একমাত্র বিএসআরআই আখের বীজ উৎপাদন ও মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি। অধিক ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও চিনি শিল্পের উন্নয়নই এই প্রকল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য। স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদন হওয়ায় এই জাতের আখ চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। একই সাথে ৪৬ জাতের আখের চাষ আরো সম্প্রসারিত হলে চিনি শিল্পে পর্যাপ্ত আখ সরবরাহ সম্ভব হবে। দেশে চিনির ঘাটতি পূরণ হবে বলে দাবি চিনি শিল্প সংশ্লিষ্টদের। একই কারণে এই প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাটোর সদর উপজেলার পন্ডিত গ্রামের চাষী রুস্তুম আলী শেখ জানান, আমি এই জাতের চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছি। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আমাকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও সেচ সুবিধা প্রদান করা হয়। চলতি বছর প্রতি বিঘায় সাড়ে ৪’শ মণ আখ উৎপাদনের আশা করছি। প্রকল্পটি চালু থাকলে আমার মত আরো অনেক কৃষক উপকৃত ও লাভবান হতে পারবেন।
অপর কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, তার জমি একটু উচু হওয়ায় ভাল ফলন পাচ্ছেন। তিনি বিঘা প্রতি ৬০০মণ হারে ফলন পাচ্ছেন। তাছাড়া ৪৬ জাতের আক চাষাবাদে পোকারাাক্রমন নেই বললেই চলে।
জামাত আলী নামে অপর বএকজন বলেন, দেশীয প্রচলিত জাতের আখের চাষ করে ৮ গাড়ী বা ২৪০ মণের বেশী আখ উৎপাদন হয়না। কিন্তু ৪৬ জাতের আখ ১৫ থেকে ১৮ গাড়ী পর্যন্ত ফলন হয়।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা জাহান জানান, বিএসআরআই-৪৬ একটি পরিশোধিত ভিত্তি বীজ। প্রত্যায়িত ভিত্তি বীজের কৃষকদের মাঝে সরবরাহের মাধ্যমে আখ চাষ বৃদ্ধি করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবে, চিনি শিল্প এগিয়ে যাবে।
বিএসআরআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ ইমাম হোসেন জানান, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগমুক্ত ভিত্তি বীজের প্রত্যায়িত প্লট তৈরী করা, ফলন বৃদ্ধি করা। এর ফলাফল খুব ভালো। এই ধরনের প্লটে রোগের প্রকোপ অনেক কম। ভালো বীজ অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে চিনির ঘাটতি পূরণ করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।
নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া জানান, বিএসআরআই-৪৬ জাতের আখ অধিক উৎপাদনশীল, অধিক চিনিধারণ সম্পন্ন ও অধিক রিকভারি সম্পন্ন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অবশ্যই চিনি শিল্প লাভবান হয়েছে। এই প্রকল্পটি আরো এক বছর চালু থাকলে জেলার দুটি মিল জোন এলাকায় রিপ্লেসমেন্ট দিয়ে অধিক পরিমান আখ উৎপাদন ও চিনির রিকভারি সম্ভব হবে।
বিএসআরআই’র মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রকল্পটি এই বছরই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমান সরকার চিনি শিল্পের দিকে নজর দিচ্ছে। দেশে বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ আখের প্রয়োজন হবে। এজন্য আমাদের আখের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিএসআরআই-৪৬ জাতের আখ চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে দ্বিগুণ লাভবান হওয়ার পাশাপাশি চিনির ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে।
আফরোজা