বেলা বাড়লে নাকি শীত কমে। তবে বেলা যতই বাড়ছে কনকনে শীত ততই অনুভুত হচ্ছে। হাজার হউক মাঘে শীতের তেজ বলে কথা। এমন মন্তব্য করলেন শহরের রিক্সা চালক রাসেল মিয়া(৪০)। প্রবাদ আছে মাঘের শীতে বাঘ কাঁদে। পহেলা মাঘে আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারী) তেমনি অবস্থা সৃস্টি হয়েছে উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী সহ আটজেলার জনপদে। সূর্য্যের লুকোচুরিতে কনকনে ঠান্ডা অনুভ‚ত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষকে কাঁপাচ্ছে। কুয়াশায় ঢেকে থাকছে জনপদ। আবহাওয়া অফিস বলছে, তামপাত্রা আরও কমবে। বয়ে যেতে পারে আরও এক থেকে দুইটি শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে কুয়াশাও বাড়তে পারে।
আকাশ মেঘে ঢাকার কারনে উত্তুরি বরফছোঁয়া বাতাস বইছে। সুর্য্যের হাসি মিলে গেছে। ফলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। শীত বাড়ার এই সময়ে অসুখ-বিসুখও বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা জ্বর-সর্দি, গলা ব্যথা ও ভেঙে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং আমাশয়ে আক্রান্ত হচ্ছে।
দার্জিলিং, হিমালয় পর্বত সংলগ্ন হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে মাঘের শীতের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে।শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে। এদিকে সেচ নির্ভর বোরো আবাদ শুরু হয়েছে। তীব্র শীতে ইরি-বোরোর চারা রোপণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এতে সার, বীজ ও সেচের সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের মজুরিতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।
এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র শীতের কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে। হাড়কাঁপানো শীতে জীবিকার প্রয়োজনে দোকান খুলে বসে থাকলেও তাতে তেমন লাভ হচ্ছে না। গৃহিণী লাভলী বেগম জানান, সাতসকালে উঠেই সন্তানদের স্কুলে রেখে আসতে হয়। গত কয়েকদিন থেকে ঠান্ডায় তার ছোট মেয়ে ও তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। এমনকি চিকিৎসার জন্য এর মধ্যে সদর হাসপাতালেও গিয়েছিলেন।
উত্তরের আট জেলার মধ্যে আবহাওয়া অফিস রয়েছে ৬টি। সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে সর্ব উত্তরের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যান্য এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৩, নীলফামারীর ডিমলায় ১২ দশমিক ৫, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৩ দশমিক ৬, দিনাজপুরে ১২ দশমিক ৮ ও বিভাগীয় শহর রংপুরে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলনিয়াস। তবে এই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। বেলা যতই বাড়ছে শীতের কামড় তত বেড়েই চলেছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাঘের শীতের একটা ঐতিহ্য রয়েছে। তাই শীত বাড়বে আরও কয়দিন। দিনের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে নীলফামারীর তিস্তা নদী এলাকা ডিমলায় ঢাকাস্থ ডিমলা ফোরামের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্য মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেছেন,, “আজকের এই কম্বল কোনো দয়া নয়, এটি আপনাদের অধিকার। আমরা দয়া করতে আসিনি, বরং ভাই হিসেবে শীতার্ত ভাইদের পাশে দাঁড়িয়েছি। জামায়াত ও ছাত্রশিবির মতায় না গিয়েও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। ইনশাআল্লাহ, একদিন মতায় গেলে রাষ্ট্রীয় বিশেষ দূতের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।”অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী, ডিমলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, উপজেলা নায়েবে আমির প্রভাষক কাজী হাবিবুর রহমান, ডিমলা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি কাজী মাওলানা রুকনুজ্জামান বকুলসহ আরও অনেকে।
মহি