ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

আশঙ্কাজনক হারে কমছে অতিথি পাখি, কারণ কী?

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

আশঙ্কাজনক হারে কমছে অতিথি পাখি, কারণ কী?

ছবি: সংগৃহীত

মাত্র চার বছরে বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফাঁদ পেতে ও দেশীয় যন্ত্র দিয়ে অবাধে পাখি শিকার করার ফলে প্রতিবছর পাখির সংখ্যা কমছে। শীত মৌসুমে শিকারিদের তৎপরতা বাড়ায় এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

টাঙ্গুয়া হাওরটি আন্তর্জাতিক জলাভূমি সংরক্ষণ বিষয়ক কনভেনশন দ্বারা স্বীকৃত দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে ঘোষিত। তবে, অন্যান্য বছরের মতো এবছর হাওরে অতিথি পাখির আগমন তেমন উল্লেখযোগ্য হয়নি। পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, কারণ তারা পাখির উপস্থিতি পাচ্ছেন না।

এ বছর টাঙ্গুয়া হাওরে অতিথি পাখির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম। ডিসেম্বর মাসে, হাওরের বিল, জলাশয় ও কান্দায় পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন তা নেই। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা পাখি না দেখে হতাশ হয়ে ফিরছেন।

শীত মৌসুমে টাঙ্গুয়ার অন্যতম প্রধান সৌন্দর্য ছিল অতিথি পাখির আগমন। কিন্তু এবছর পাখি না আসায় হাওরের সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়ে পড়েছে। ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পাখি না দেখেই ফিরতে হচ্ছে পর্যটকদের।

স্থানীয়রা পাখি না আসার জন্য কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তারা জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের দায়িত্বে থাকা আনসার, কমিউনিটি গার্ড এবং নৌকার মাঝিরা ম্যানেজ করে রাতের অন্ধকারে টর্চ লাইট, জাল এবং বিষটোপ ব্যবহার করে পাখি শিকার করছেন, যার ফলে পাখিরা এ হাওর থেকে সরে যাচ্ছে। পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসে অতিথি পাখির আগমন কম হলেও ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এটি বাড়তে পারে।

হাওর পাড়ের গ্রামবাসীরা আরও জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাবন, হিজল কড়চ, নলখাগড়ার বন কমে যাওয়া, শ্যালো মেশিনের শব্দ এবং চোরাই শিকারিদের কার্যকলাপের কারণে পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তারা সতর্ক করে বলছেন, ভবিষ্যতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পাখির আগমন আরও কমে যেতে পারে।

তবে, হাওরে পাখি শিকার করা নিষিদ্ধ। সার্বক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনসার বাহিনী যৌথভাবে পাহারা দিলেও ফল তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না। কিছু অসাধু লোকজন অবৈধভাবে পাখি শিকার করছে, যার কারণে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে, সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার ১৮ মৌজায়, ৫১টি জলমহালের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর আয়তন নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জলাভূমি, এবং বর্ষাকালে এর আয়তন প্রায় ২০ হাজার একর পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

অতএব, টাঙ্গুয়া হাওরের সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় ও প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি হয়ে উঠেছে।

নুসরাত

×