ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

গ্যাস সংকটে যমুনা সার কারখানা এক বছর ধরে বন্ধ

সার সংকটের শঙ্কা বোরো মৌসুমে

সংবাদদাতা, সরিষাবাড়ী, জামালপুর

প্রকাশিত: ২১:৩০, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৫৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

সার সংকটের শঙ্কা বোরো মৌসুমে

.

সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা গ্যাস সংকটের কারণে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে যমুনার কমান্ড এরিয়ায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সার সংকটের শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। অপরদিকে কর্মহীন হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছে কারখানার সঙ্গে জড়িত প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। সরেজমিনে জানা যায়,  ১৯৯০ সালে কারখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ এবং উত্তরাঞ্চলে দুই বিভাগের ১৬টি জেলাসহ প্রায় ২১টি জেলার সারের চাহিদা মিটিয়ে আসছে এ কারখানা। দেশের সব জেলার ব্যবহার উপযোগী এ যমুনার সারের চাহিদাও বেশি। অপরদিকে কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কারখানার সঙ্গে বিভিন্ন কর্মে জড়িয়ে পড়ে এলাকার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক।

কারখানার চাকা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোরে তাদের জীবন ও জীবিকা আর বন্ধ হলে থমকে যায় সেই শ্রমিকদের জীবিকাও। এ দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে খুব দুর্বিষহ জীবন পার করছেন তারা। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায়  কারখানা প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হারে এক বছরে ক্ষতি আনুমানিক এক হাজার দুইশ’ ৬০ কোটি টাকা। দীর্ঘ সময় কারখানা বন্ধ থাকায় মূল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। চলতি মাসেই যদি কারখানা চালু না করা হয় তাহলে চলতি ইরি-বোরো পিক সিজনে সার সংকটে পড়বে বলে জানান অনেক কৃষক। কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯১ সালে ইউরিয়া উৎপাদনে যায় তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারনে উৎপাদন কমে বর্তমানে ১ হাজার ৪০০/৪৫০ মে. টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। সম্প্রতি ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে সার উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। এ জন্য সেখানে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনা সার কারখানায় গত বছর ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এর পর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানার কমান্ড এরিয়ায় সারের চাহিদা সীমিত পরিসরে মেটাতে অন্য কারখানা হতে দুই অর্থবছরে সার আমদানি করতে হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার টন। 
সার ডিলার মিলন মিয়া জানান, যমুনার ইউরিয়া সারের চাহিদা এমন যে যদি যমুনার সার দোকানে থাকে তাহলে কৃষক অন্য কোনো ইউরিয়া সার নির্ধারিত দামের কম দামেও নেবে না। তারা যমুনাই নেবে। মীম ট্রেডার্স এন্ড ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিক মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ কারখানার ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। এতে কয়েকশ’ শ্রমিক কাজ করে। কারখানা বন্ধ থাকায় বরাদ্দও নেই তাই তাদের বেতন-বোনাস ঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছে। যদি কারখানার উৎপাদন অব্যাহত থাকত তাহলে প্রতি অর্থবছরে প্রায় চার লাখ টন সার উৎপাদন হতো। এতে ১৬ জেলার সার নিয়মিত বরাদ্দ ও সরবরাহ হতো। এতে আমাদের ভালো কমিশন আসত শ্রমিকরা ভালোভাবে বেতন পেত। অপরদিকে আমদানির চাপ কমে যেত। তাই  এই কারখানায় দ্রুত গ্যাস সরবরাহ করে  ফ্যাক্টরি  চালু করার জন্য  ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, যমুনা সার কারখানাটি নির্মাণকারী জাপানি প্রতিষ্ঠান (এম এইচ আই) ২৫ বছর সক্ষমতার কথা বল্লেও ভালো কাজের ফল হিসাবে  কারখানার  বয়স ৩৪ বছর অতিবাহিত হলেও কারখানায় এখনো নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হলে বছরে ৪ লাখ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করে যমুনার এ বিশাল অংকের ক্ষতি থেকে উঠে লাভের মুখ দেখব বলে আশা রাখি।

আর এমনটি হলে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে সার আমদানি করতে হবে না। সরকারের গুনতে হবে না বিশাল অংকের ভর্তুকি। কারখানায় দৃশ্যমান কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। যদি গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায় তাহলে নিজস্ব দক্ষ জনবল দ্বারা সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ৭ দিনের মাঝেই কারখানা উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে পরবর্তীতে চালাতে গেলে সকল যন্ত্রাংশের ওপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ে। কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, আমরা কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেয়েছি তারা বলেছে পিক সিজনে গ্যাস দেবে। যেহেতু পিক সিজন শুরু হয়ে গেছে এখনো গ্যাস পাইনি। তবে আশায় রয়েছি গ্যাস পাব।

×