ছবিঃ সংগৃহীত।
নতুন ভাইরাস হিউম্যান মেটোপনিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) সংক্রমণ রোধে দেশের আন্তর্জাতিক বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোষ্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক নির্দেশনা জারি করার পর বেনাপোলে অবস্থিত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়। এর ফলে প্রতিদিন ভারত থেকে যে সকল যাত্রী বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তাদের শরীরে সংক্রমণ আছে কি না তা নিশ্চিত হচ্ছে তারা। পাশাপাশি যাত্রীদেরকে মাক্স পরিধান সহ নানা সুরক্ষার কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোলস্থ স্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার আব্দুল মজিদ। তবে অভিযোগ উঠেছে প্রতিদিন যে সকল পণ্যবাহী ট্রাকের ড্রাইভার ও সহকারীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তাদের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
জানা গেছে, ভাইরাসটি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখা দিয়েছে। এর থেকে রক্ষা পেতে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাস্ক পরাসহ বিভিন্ন সচেতনমূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী পাসপোর্টধারী যাত্রীসহ সব জনসাধারণকে। এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জোর দিয়েছেন বেনাপোল ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্যকর্মীরা।
আরোও জানা গেছে, এইচএমপিভি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে। দুই বা তার বেশি মানুষের মধ্যে সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করলে তা থেকেও ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চীনে এইচএমপিভি ভাইরাস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে সেটি জাপান, মালয়েশিয়া ও হংকংয়ে সংক্রমণ ধরা পড়ে। সম্প্রতি সংক্রমণ ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও। এজন্য ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে আশঙ্কায় গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে একটি নির্দেশনা পাঠাই। এরপর বেনাপোল ইমিগ্রেশন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এজন্য ভারত থেকে ফেরত আসা সকল পাসপোর্টধারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, যাত্রীদের মাস্ক পরা, নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান, সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শের অনুরোধ করছেন ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললে সংক্রমণ এড়িয়ে নিজেকে ও দেশকে সুরক্ষিত রাখা যাবে বলে তারা জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার ভারত থেকে ফেরত আসা যাত্রী মোকলেছুর রহমান জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন এক সপ্তাহ আগে। ফেরার পথে ভারতের পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন এইচএমপিভি ভাইরাসের পরীক্ষা না করলেও বেনাপোল ইমিগ্রেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। ভাইরাসটি থেকে নিরাপদ থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ ও দিয়েছেন আমাকে।
জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি ইমতিয়াজ মোহাম্মদ আহসানুল কাদের ভূঁইয়া জানান, ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে। ভারত থেকে আসা পাসপোর্টধারীদের কেউ আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষা করছেন ইমিগ্রেশনে অবস্থিত স্বাস্থ্য বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী মেডিক্যাল কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে এইচএমপিভি সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলোক একটি চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে এসেছে। এর পর থেকে ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।
জানা গেছে, বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয়শত যাত্রী যাতায়াত করলেও ৫ আগষ্ট এর পর যাত্রী পারাপার অনেকাংশে কমে গেছে তার পরও প্রতিদিন যে সকল যাত্রী ভারত থেকে ফিরে আসছে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে বেনাপোল ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগে মাঙ্কিপক্স, ওমিক্রন, করোনা, নিপা ও জিকা ভাইরাস রোধেও সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল। এদিকে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে যে সকল পণ্য বোঝায় ট্রাক এর চালক ও সহকারীরা আসছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে এ সকল চালক ও সহকারীদের মাধ্যমে হিউম্যান মেটোপনিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দরের একজন উর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মহি