হবিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পইলের মাছের মেলা যেন প্রাণের উৎসব। এ মেলায় হাওড় এলাকার দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। তাই অনেকে এ মেলায় যান। এখানে বোয়াল, আইড়, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, কালীবাউস, টাকি, পুটি, মাগুরসহ শতাধিক প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের ঈদগাহের কাছে বসে দেশীয় মাছের এ মেলা। মেলার বেশিরভাগ মাছ হাওড় ও বিল থেকে সংগ্রহ করা। এই মেলা উৎসবে রূপ নেয়। হবিগঞ্জ ছাড়াও মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, এমনকি ঢাকা থেকেও এখানে লোকের সমাগম হয়।মেলায় আলাপকালে বিক্রেতা ফজল মিয়া বলেন, এবার বড় আকারের দুটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছেন। এগুলোর দাম হেঁকেছেন ৭০ হাজার টাকা। মুদ্দত আলী ও ইমরান মিয়া নামে দুই বিক্রেতা জানান, হাওড় থেকে জীবিত বোয়াল ও আইড় মাছ এনেছেন। বিক্রির জন্য বসে আছেন। ক্রেতারা এসে দাম কষাকষি করছেন।
বিক্রেতা সাজু মিয়া বলেন, একটি রুই মাছ নিয়ে এসে ৩৫ হাজার টাকা দাম চেয়েছেন। তিনি জীবিত আইড় মাছও নিয়ে এসে দাম চাচ্ছেন ৫০ হাজার টাকা। এমনভাবে দুই শতাধিক বিক্রেতা মাছ নিয়ে বসেন। ক্রেতা বাচ্চু মিয়া, কাজল মিয়া, আবুল হোসেন বলেন, মেলায় প্রচুর মাছ এসেছে। আমরা মাছ ক্রয় করেছি। মাছগুলো দেশীয় নানা প্রজাতির। আমাদের ন্যায় শত শত ক্রেতা মাছ ক্রয় করেন। যুগের পর যুগ এ মেলা ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
মাছের মেলা উপলক্ষে কৃষিজাত পণ্য, শিশু-কিশোরদের খেলনা, দেশীয় ফার্নিচার, তৈজসপত্র, সবজি ও ফল, শীতকালীন পোশাক, মিষ্টান্নসহ কয়েকশত স্টল নিয়ে মেলা জমে ওঠে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে ২০০ বছর আগে পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা শুরু হয়। পৌষ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় পইল ইউনিয়ন পরিষদ। প্রতি বছরের মতো এবারও পইল গ্রামের ঈদগাহের পাশে বসে মেলা বসে।
এ মেলায় হবিগঞ্জের হাওড়, বিল ও পুকুরের দেশীয় নানা প্রজাতির কেমিকেলমুক্ত মাছ ছাড়াও বাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেরা বড় বড় মাছ বিক্রি করতে আসেন।
পইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ বলেন, যদিও সংক্রান্তির দিন মেলা বসে। কিন্তু মেলার আগের ও পরের দিন মিলে মেলা গড়ায় তিন দিনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলায় লোকজন নির্বিঘ্নে আসার সুযোগ করা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মেলা এলাকার সাধারণ মানুষের প্রাণের উৎসব।
রাজু