ছবি : জনকণ্ঠ
উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে অপহরণ, মাদক কারবার, মানবপাচার, ধর্ষণ, খুন, চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করেও থামানো যাচ্ছেনা অপরাধ কর্মকান্ড। তাদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া নিয়মিত মামলায় শতাধিক আসামি (রোহিঙ্গা) হয়েছে।
ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে থাকা ১৪-এপিবিএনের এডিশনাল ডিআইজি সিরাজ আমিনের দেয়া তথ্য মতে, শিবিরগুলোতে গত ১ বছরে বিভিন্ন অপরাধে ১৩১টি মামলায় ৩৭৯ জনকে আটক করা হয়।বছরজুড়ে বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হয় ওয়ান শুটারগান ৪৮ টি, বিদেশী পিস্তল ১২ টি, জি৩ রাইফেল ৩ টি, রাইফেল গুলি ১৬১টি, পিস্তলের গুলি ২৮ টি, রাইফেল গুলির খোসা ৪৪ টি, কার্তুজ ৫ টি ও কিরিস ৩ টি। ৮-এপিবিএন পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি ফজলে রাব্বির দেয়া তথ্যমতে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ১৭৬ টি মামলায় ৩৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ওয়ান শুটারগান ৬৯ টি, বিদেশী পিস্তল ৮টি, জি-৩ রাইফেল ১ টি, এসএলআর ১ টি, মর্টাশেল ২ টি, এলজি ২ টি, গুলি ২০৫ রাউন্ড, কার্তুজ -১৯ টি, গ্রেনেড ৬ টি, গুলির খোসা ৮৪ টি, কিরিস ৩ টি। উখিয়াতে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বছর জুড়ে নানান অপরাধে মামলা হয়েছে ৩০৮টি। এর মধ্যে তারা আটক করতে সাক্ষম হয়েছে ৭৩৫ জন রোহিঙ্গাকে। নানা উদ্যোগেও ক্রমবর্ধমান অপরাধকাণ্ডে ঘুম হারাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন করা না গেলে সামনে আরও বড় হয়ে দেখা দেবে এই সংকট।
এদিকে রোহিঙ্গারা দলগত সশস্ত্র তৎপরতা, মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। বেড়েই চলেছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। মানবিকতার কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও তারা উখিয়াবাসীর নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অসামাজিক কর্মকান্ডের আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। অবিলম্বে আরও কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বিদেশি শক্তির মদদে তারা আরও ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, রোহিঙ্গারা কাঁটাতার পার হয়ে লোকালয়ে অনায়াসে ঘুরে বেড়ায়। তারা বড় বড় ব্যবসা বাণিজ্যও করছে বাজারে। অনেকেই এনআইডি, পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সনদও হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে জমি কিনে বসতিও শুরু করছে। এখানে প্রশাসনের কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে। তাদের অবাধ বিচরণে স্থানীয়রা দিন দিন ভাড়াটিয়ার মতো হয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র চোরাকারবারেও জড়িত। এ মাদক চোরাকারবারের পেছনে তাদের রয়েছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ। ফলে মাদকাসক্তি তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও বাধার সৃষ্টি করছে। এর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপর। উখিয়া-টেকনাফে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। এর মধ্যে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা উখিয়াতে অবস্থান নিয়েছে। উখিয়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের জনসংখ্যা হিসাব করলে দেখা যায় ভোটার সংখ্যাসহ সর্বোচ্চ ৩ লাখ স্থানীয় জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গাদের সংখ্যায় স্থানীয়রা এক ধরণের সংখ্যালঘুর মতো। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয়দের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে স্থানীয়রা ভাড়াটিয়ার মতো আচরণ করে চলে আসতে হচ্ছে।
উখিয়া হোস্ট কমিউনিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। ব্যবসা করতে গেলেও রোহিঙ্গা, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজেও রোহিঙ্গা লেবার, মাদক কারবারেও রোহিঙ্গা ভালো-খারাপ সর্বত্রে তারা মিশে গেছে। এসবের প্রতিকার কোথায় আমাদের জানা নেই। তাদের এখনই লাগাম টেনে না ধরলে উখিয়াবাসীকে খেসারত দিতে হবে।
রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে এপিবিএন পুলিশের পাশাপাশি উখিয়া থানা পুলিশও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি আরিফ হোসাইন। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ সিরাজ আমিন জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে এপিবিএন পুলিশের ২টি ডিপার্টমেন্ট কঠোরভাবে কাজ করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন নানান ভাবে কৌশল অবলম্বন করে কাজ করছে। গত ২ মাসে আহত-নিহতের ঘটনা এবং বড় কোন ইস্যুও দেখা দেয়নি। হলেও আগের চেয়ে অনেকটা কম। অপহরণের একটা বিষয় সেগুলো মূলত টেকনাফেই হচ্ছে তাও দুর্গম পাহাড়ে।
JF