ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১

তারাও মানুষ, শুধু কন্যা নয়

কন্যাশিশুরা এখন আর অপ্রত্যাশিত নয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুকসুদপুর

প্রকাশিত: ০২:৩০, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

কন্যাশিশুরা এখন আর অপ্রত্যাশিত নয়

ছবি : সংগৃহীত

কন্যাশিশুরা এখন আর অপ্রত্যাশিত নয়। কন্যাশিশু যদি না থাকতো তাহলে হয়তো আমাদের সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যেত। নারীরা শুধুমাত্র কারো মা, বোন, স্ত্রী নয় বরং ধৈর্য, সাহস, সংগ্রাম ইত্যাদি বিশেষণের এক ভিন্নরুপ। তাদের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে আমাদের সভ্যতা। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিরাজমান। পুরুষদের মতো নারীদের ও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়, নারীদের কাজ হচ্ছে রান্নাবান্না আর সংসার সামলানো। 

শিক্ষা শুধুমাত্র চাকরি পাওয়ার জন্যে নয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষার প্রয়োজন। উন্নত মানবিক মানুষ হওয়ার জন্যেও শিক্ষা প্রয়োজন। এক শ্রেণির মানুষ ধর্মীয় অজুহাত দেখিয়ে নারীদেরকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করেছে। কোনো ধর্মেই নারীদেরকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখার কথা বলা হয়নি। একজন নারীর জীবনের প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রতিবন্ধকতার ইতিহাস। 

শতবাঁধা পেরিয়ে যখন কোনো নারী স্বাবলম্বী হয়ে কর্মক্ষেত্রে ভালো ফলাফল করে, সেখানেও তাকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। নারীদেরকে মানসিকভাবেও ছেলেদের চাইতে দূর্বল ভাবা হয়। ফলে মেধাবী হওয়ার পরেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। সমাজে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। 

নারীরা শিকার হচ্ছে যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, ইত্যাদি ঘৃণ্য অপরাধের। কিছু ক্ষেত্রে বিচার হলেও বেশিরভাগ অপরাধীই আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়।

কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য প্রাগৈতিহাসিক। অন্যদিকে কন্যাদের বাইরের অবস্থা কী নিরাপদ? না, কারণ রাস্তায় বের হলেই ওঁত পেতে থাকে কিছু কুলাংগার ছেলে, যুবক, বৃদ্ধ। পরিবার ছাড়াও সামাজিক ভাবেও তারা হচ্ছে নানাভাবে নির্যাতিত।

পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন করা হয়। জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করে থাকে।

কন্যা শিশুর শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, পুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায়ের অধিকার, বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে এ দিবসের সূচনা হয়। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নামক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি প্রকল্পরূপে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের জন্ম হয়েছিল।

২০১১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর প্রথম কানাডায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে যা প্রতিবছর জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ যথাযথ মর্যাদায় পালন করে আসছে।

মুকসুদপুর পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মুস্তারি খানম বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক মর্যাদা, ভালোবাসা প্রায় বলতে গেলে সব দিক থেকেই বঞ্চিত কন্যা শিশুরা। শুধু যে আমাদের দেশের চিত্র এমন তা নয়, সারা বিশ্বেই কোনো না কোনো জায়গায় প্রতি মুহূর্তে অবহেলার শিকার হচ্ছে কন্যা শিশু। কল্যাণমূলক সৃষ্টির সাথে নারী-পুরুষের অবদান অনস্বীকার্য। শুধুমাত্র পুরুষরাই সব সৃষ্টির সাথে জড়িত নয়।  সব শিশুদেরই সমভাবে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে।

কন্যাশিশুরা শিক্ষিত হলে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। কন্যা শিশুদের বোঝাতে সাহায্য করি- "তারাও মানুষ, শুধু কন্যা নয়।"


কন্যাশিশুরা এখন আর অপ্রত্যাশিত নয়।
 

শরিফুল রোমান/মো. মহিউদ্দিন

×