ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ
বিজিবি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। আমাদের জায়গা দেব না আমরা তো কঠোরই। তারা তো বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা করার চেষ্টা করবে।
আমরা যেভাবেই হোক ছলে-বলে-কৌশলে সেই সমস্যার সমাধান করব। তিনি বলেন, আমরা তাদের এই কাজগুলো করতে দেব না। ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিলে চিঠি দেওয়া হবে। এলিফ্যান্ট রোডে একজন ব্যবসায়ীকে কোঁপানো হয়েছে, এসব ঘটনা ছড়িয়ে পড়ছে- দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাঝে মাঝে ঘটনা ঘটছে। আগে এত মিডিয়া ছিল না, এখন একটা আওয়াজ হলে আপনারা জেনে যান।
আগে এত জানাজানি হতো না। আপনারা এসব জানাচ্ছেন বলে আমরা উপকৃত হচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি। যদি আপনারা না জানাতেন হয়তো আরও বেড়ে যেত। রবিবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
সম্প্রতি সীমান্তের পাঁচটি জায়গায় ভারত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শুরু করেছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিজিবির এবং স্থানীয় মানুষের শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত ওই সব স্থানে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে এ পর্যন্ত চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এগুলোর মধ্যে ছিল- সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে ডিফেন্স পোটেনশিয়ালিটি আছে এমন কাজ কেউ করতে পারবে না। শূন্য লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে একে অপরের সঙ্গে কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে। সম্মতি ছাড়া তারা এ কাজটা করতে পারবে না।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভারত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে তিন হাজার ২৭১ কিলোমিটারে ইতোমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ফেলেছে। বাকি রয়েছে ৮৮৫ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারত সীমান্তে কিছু অসম কাজ করেছে, যেগুলো ভারতের করা উচিত হয়নি, কিন্তু আমাদের আগের সরকার সেই সুযোগ দিয়েছে।
এ সুযোগের মধ্যে রয়েছে তারা ১৬০টি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, সেখানে ঝামেলা রয়েছে। ৭৮টি স্থানে আরেকটি ঝামেলা রয়েছে। এখন পাঁচটি স্থানে ঝামেলা দেখা দিয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোর, নওগাঁর পতœীতলা, ফেনী, কুষ্টিয়া ও কুমিল্লায় সম্প্রতি (কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে ঝামেলা দেখা দিয়েছে।
কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের ভেতরে একটা আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিজিবি খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় তারা (ভারত) এই জায়গা (কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ) থেকে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখানে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে- আগের সরকার যেহেতু কিছু কিছু জায়গায় লিখিত দিয়ে গেছে। এই জায়গায় এটা করতে পারবে, ওই জায়গায় ওইটা করতে পারবে। যেগুলো তাদের দেওয়া উচিত হয়নি।
উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিজিবির সঙ্গে আমাদের জনগণ খুব শক্ত অবস্থান নেওয়ায় অন্য জায়গাগুলোতে তারা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদের এ শক্ত অবস্থানের জন্য বিজিবি এবং বাংলাদেশের জনগণকে আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। স্থানীয় সাংবাদিকরা আমাদের এক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন।
ভারতের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে, আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি। সীমান্তে এখনকার অবস্থা কী- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, কাজ বন্ধ আছে। যে কয়টা জায়গায় কাজ শুরু হয়েছিল সব জায়গায় বন্ধ আছে। তিনি বলেন, আমরা এই কাজগুলো করতে দেব না।
লালমনিরহাটের তিন বিঘা করিডোরে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭৪ সালে যখন বেরুবাড়ী চুক্তি হয়েছে, তখন আমরা বেরুবাড়ী দিয়ে দিয়েছি। আমাদের সংসদ সেটা অনুসমর্থন করেছে। কিন্তু তিন বিঘা করিডোরে যাওয়ার জন্য আমাদের প্যাসেজটা দেওয়ার কথা ছিল ভারতের। এটা সারা জীবনের জন্য তারা আমাদের দিয়ে দেবে। আমরা দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তারা সংসদে অনুসমর্থন করেননি, জায়গাটা আমাদের দেয়ওনি। এক ঘণ্টা খুলত, একঘণ্টা বন্ধ রাখত, ৬ ঘণ্টা খুলত, ৬ ঘণ্টা বন্ধ রাখত, রাতে পুরোটাই বন্ধ থাকত।
২০১০ সালে একটি চুক্তি হয়, সেখানে বলা হয় করিডোর ২৪ ঘণ্টা এটা খোলা থাকবে, আমরা ব্যবহার করতে পারব। তার পরিবর্তে একটা বিরাট ঝামেলা করেছে যে, আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে যে আমাদের জায়গাটা সেখানে জিরো লাইনের ওপরে তারা কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারবে। যেটা ছিল ১৫০ গজের মধ্যে করতে পারবে না। এজন্য সেখানে বড় ধরনের একটা সমস্যা হচ্ছে।
তারা সেখানে বেড়া নির্মাণ করতে গেলে, আমরা বাধা দেই, কিন্তু আইনগতভাবে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। যেহেতু আমরা ইতোমধ্যে সাইন করেছি। আমরা যদি সেখানে বেশি কঠোর হই তারা আবার প্রবেশের ক্ষেত্রে ঝামেলা করে।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা করে, যাতে কাজগুলো বন্ধ করা যায়।
সীমান্তে আমরা শক্তি বাড়াচ্ছি কি না- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বর্ডারে আমাদের প্রচুর শক্তি আছে। জনগণ হলো আমার বড় শক্তি।
আপনি বলেছেন গত সরকার কিছু সুবিধা দিয়ে ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি করেছে। সেই সুবিধাগুলো বাতিল করা হবে কি না- এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এজন্যই তো আমাদের মহাপরিচালক ফেব্রুয়ারি মাসে যাচ্ছে। আমরা তাদের একটা চিঠিও দেব। যে অসম চুক্তিগুলো হয়েছে সেগুলো যাতে বাদ দেওয়া যায়। এই সমস্য ার সমাধান হবে বলেও আশাবাদী স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এলিফ্যান্ট রোডে একজন ব্যবসায়ীকে কোঁপানো হয়েছে, এসব ঘটনা ছড়িয়ে পড়ছে- দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মাঝে মাঝে ঘটনা ঘটছে। আগে এত মিডিয়া ছিল না, এখন একটা আওয়াজ হলে আপনারা জেনে যান। আগে এত জানাজানি হতো না। আপনারা এসব জানাচ্ছেন বলে আমরা উপকৃত হচ্ছি। সাথে সাথে আমরা অ্যাকশন নিচ্ছি। যদি আপনারা না জানাতেন হয়তো আরও বেড়ে যেত।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিং, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তা আলোচনা হবেই।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে সাংবাদিকরা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, না, না, চরম অবনতি হয়েছে এটা তো আমি বিশ্বাস করব না। এত চরম অবনতি হলে তো আমরা এখানে ঢুকতে পারতাম না। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি ঘটনা ঘটছে। আসলে আগে তো এত গণমাধ্যম ছিল না এখন একটা ঘটনা কোথাও ঘটলে সবাই জেনে যায়। আগে জানাজানি হতো না ঘটনা ঘটে যেত। কিন্তু এখন ছোটখাটো ও বড় ঘটনা ঘটলে জানাজানি হয়। এগুলো জানার ফলে আমরা উপকৃত হচ্ছি এবং সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিচ্ছি।