ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১

রাজস্ব বঞ্চিত সরকার

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালি লুট

স্টাফ রিপোার্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বালি লুট

চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে কোটি কোটি টাকার বালি লুটের মচ্ছব

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে চলছে বালি লুটের মহোৎসব। বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বালি লুট করছে স্থানীয় একটি বালু সিন্ডিকেট। বছরের পর বছর থেকে বালি লুটের মহোৎসব চলার সঙ্গে বেড়েই চলছে অবৈধ ড্রেজারের সংখ্যা।

নিয়ম নীতিকে তোয়াক্কা না করেই ব্রহ্মপুত্রের চিলমারীর প্রায় শতাধিক পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর দিক পরিবর্তন হয়ে একাধিক ¯্রােত তৈরি হয়ে গ্রামের পর গ্রামসহ হাজার হাজার একর জমি চলে যাচ্ছে নদীতে। 
স্থানীয় প্রশাসনের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় চলছে বালু উত্তোলন। মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব সেরে নিচ্ছেন তারা। সেই সুযোগে সিন্ডেকেট চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কতিপয় বালি ব্যবসায়ীরা চিলমারীর স্থানীয় উন্নয়নের নামে বালি উত্তোলনের কথা বললেও বছরে লাখ লাখ সিএফটি বালি চিলমারীর বাইরে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। 
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র থেকে বছরের পর বছর ধরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে একটি সিন্ডেকেট। শুরুর দিকে ২/১টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করলেও বর্তমানে প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ড্রেজার দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের বুকে আর বালি উত্তোলন ও বিক্রি করছে। জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পূর্বের বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে আর একটি নতুন গ্রুপ প্রভাব দেখিয়ে বালু উত্তোলন করে চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে শ্যালোমেশিন ছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের বুকের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফকিরেরহাট এলাকার মনজু বলেন, একে তো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আর সঙ্গে নদীভাঙন রোধে রাখা ব্লোক দিয়ে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা নিজেদের ব্যবসার জন্য রাস্তা বানাইছে আর বাঁধের সড়কও শেষ করছে।
বকুল নামে আর এক ব্যক্তি জানান, এই বালুখেকোদের এত শক্তি তারা তো দিনরাত বালু তোলে আর বিক্রি করে এদিকে ভাঙন রোধের পিচিং দেবে যাচ্ছে কিন্তু কেউ দেখছে না। 
প্রতিদিন চিলমারী থেকে ডামট্রাক, শত শত ট্রাক্টর দিয়ে হাজার হাজার ঘনফুট বালু যাচ্ছে জেলাসহ বিভিন্ন প্রান্তে আর সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব। সূত্র মতে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লাখ টাকার বালি বিক্রি হয় চিলমারী বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে। আর প্রতি ঘনফুট বা সিএফটি বালি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা, যদিও তা তুলতে সিএফটি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা খরচ পড়ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি হলেও সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করায় গত বছর বর্ষার সময় শত শত বাড়িঘরসহ হাজার হাজার একর জমি নদীতে বিলীন হয়েছে, অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। বালু বিক্রির সঙ্গে দলীয় কেউ জড়িত নেই জানিয়ে উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু হানিফা জানান, একটি মহল বিএনপির সুনাম নষ্ট করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। 
চিলমারী বন্দর থানার কর্মকর্তা আইসি ইমতিয়াজ কবির জানান, আমাদের লোকবল কম এবং যানবাহন না থাকায় সব স্থানে অভিযান সম্ভব হচ্ছে না। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

×