ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১

ঢামেক মর্গে ৭ মরদেহ, স্বজনদের একজনকে শনাক্তের দাবি

মেডিকেল রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ১২ জানুয়ারি ২০২৫

ঢামেক মর্গে ৭ মরদেহ, স্বজনদের একজনকে শনাক্তের দাবি

ছবিঃ সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় নিহত হওয়া নারীসহ ৭ জনের মরদেহ এখনও পড়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মরচুয়ারীতে। রোববার পৃথক দুটি পরিবার দুটি মরদেহ প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করে। তবে ডিএনএ নমুনা মেলার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে মর্গ কর্তৃপক্ষ।

সেলিনা বেগম নামে এক নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে সেখানে লাশগুলো দেখে একটি তার স্বামীর মরদেহ বলে দাবি করেন। তার স্বামীর নাম কাবিল হোসেন। তিনি মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়া নুরে আলম নামে আরেক যুবক তার ভাতিজার মরদেহ সনাক্ত করেন। তার নাম হাসান (২০)।

রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে স্বজনরা যাত্রাবাড়ী থেকে নিখোঁজ হাসানের মরদেহ দেখে তার ভাতিজার মরদেহ বলে দাবি করেন চাচা নুরে আলম। এবং গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সেলিনা বেগম তার স্বামীর মরদেহ সনাক্তের দাবি করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের ইনচার্জ রামু দাস বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক নারীসহ ৭ জনের মরদেহ মারচুয়ালিতে রাখা আছে। সবগুলো মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। কোন স্বজন না থাকায় সবগুলো মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে অনেক স্বজনরা মরদেহ সনাক্তের জন্যে আসলেও কেউ পুরোপুরি সনাক্ত করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, আজ রবিবার দুপুড়ে একটি মরদেহ সনাক্তের দাবি করেন এক স্বজন। এবং গতকাল সন্ধ্যার দিকে মর্গে এসে এক নারী তার স্বামীর মরদেহ বলে দাবি করেন। তাদেরকে থানায় ও সিআইডিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিহত হাসানের চাচা নুরে আলম বলেন, তাদের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার কাছিয়া সাহামাদার গ্রামে। হাসান যাত্রাবাড়ী সুতিখালপাড় বালুর মাঠ এলাকায় থাকতেন। গুলিস্তানে এরশাদ মার্কেটে একটি ইলেক্ট্রিক দোকানে কাজ করতেন। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে হাসান ছিল বড়।

তিনি আরও জানান, গত ৫ আগষ্ট বিকেলে আনন্দ মিছিলের জন্য সুতিখালপাড়ের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন হাসান। এরপর আর বাসায় ফিরেনি। অনেক হাসপাতালে খুজেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে যাত্রাবাড়ী এলাকার রাস্তায় এক যুবকের পায়ে তার পেচানো, সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পড়া একটি লাশের একটি ছবি ভাইরাল হয়। সেটিই হাসানের মরদেহ ছিল। কিন্তু কোথাও খুজে পাচ্ছিলাম না। এমনকি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে কয়েকবার এসে ৬টি মরদেহ দেখে গেছি। তবে সনাক্ত করতে পারিনি। দুইদিন আগে ফেসবুকে কয়েকটা ছবি দেখে আবার ঢাকা মেডিকেলে আসি। এবং একটি মরদেহ আমার ভাতিজা হাসানের সাথে মিল পাওয়া যায়। তবে এরআগে কয়েকবার এসেছি, এই মরদেহটি দেখতে পাইনি।

সেলিনা বেগম বলেন, তাদের বাসা মুগদা মানিকনগর এলাকায়। গত ৫ আগস্ট সকালে মানিকনগর বাসা থেকে তার স্বামী কাবিল হোসেন বের হয়। সেই দিনের পর থেকে স্বামী কাবিল হোসেন আর বাসায় ফিরে আসেনি। অনেক জায়গায় খোজাখুজির পর কোথাও পায়নি। ফেসবুকে মাধ্যমে দেখতে পায় ৭টি মরদেহ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। এরপর শনিবার সন্ধ্যার দিকে সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে ফ্রিজে থাকা স্বামী কাবিল হোসেনের মতই একটি মরদেহ দেখতে পাই। আমরা ডিএনএ নমুনা দেবো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের প্রধান সদস্য নাফিসা ইসলাম সাকাফি বলেন, আন্দোলনে নিহত দুই পরিবার দুটি মরদেহ সনাক্তের দাবি তুলেছেন। যেহেতু মরদেহ গুলো সরাসরি চেনার কোন উপায় নাই। তাই স্বজনদের  ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। আমরা সিআইডির উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করছি।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মুনসুর বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় নিহত কয়েকজনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আছে। এরমধ্যে ৬টির মরদেহের সুরতহাল শাহবাগ থানা পুলিশ করেছে। একটি মরদেহের সুরতহাল করেছে যাত্রাবাড়ি থানা পুলিশ। সেলিনা বেগম নামে এক নারী একটি মরদেহ তার স্বামীর বলে দাবি করেন। তবে তার স্বামীর বয়স ও মরদেহটি বয়স অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে ডিএনএ নমুনা দিতে আবেদন করলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং যাত্রাবাড়ির অপর একটি মরদেহ সনাক্তের দাবি করেছে স্বজনরা। তাদেরকে যাত্রাবাড়ি থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

জাফরান

×