ছুটির দিন থাকায় শনিবার জমে ওঠে বাণিজ্যমেলা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নে গত এক জানুয়ারি থেকে চলছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করেন। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বাণিজ্যমেলায় থাকে ভিড়। মেলা শুরুর গত শুক্রবার ও শনিবার ছিল ১০ম ও ১১তম দিন।
সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার ও শনিবার মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়। শুক্রবার মেলায় দেড় লক্ষাধিক দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে মেলা কর্তৃপক্ষ। শনিবারও মেলার চিত্র ছিল শুক্রবারের মতো। মেলায় বেচাকেনা বাড়লেও ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীই বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো ব্যবসায়ী বেচাকেনায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাণিজ্যমেলায় গৃহস্থালি পণ্য, কসমেটিক্স, কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বাহারি সমাহার থাকে। ক্রেতারা পছন্দমতো কিনেন সেসকল পণ্য। বেশি ভিড় দেখা গেছে গৃহস্থালি পণ্যের দোকানে। দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. রায়হান জানান, আমাদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। তবে কেউ আবার দ্বিমতও পোষণ করেছেন।
ডিজনি ইটালির বিক্রয় প্রতিনিধি মো. রাজ আহমেদ জানান, বেচাকেনা মোটামুটি। ১১ দিনের বেচাকেনা তেমন সন্তোষজনক নয়। শ্যুট, ব্লেজারের দোকান তালহা ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমাদের বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। তবে দ্বিমত পোষণ করেন রিলেক্স ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. ইব্রাহিম।
তিনি বলেন, মেলায় দর্শনার্থী বেশি হলেও ক্রেতা কম। অনেকে পণ্য দেখে দেখে দাম জিজ্ঞাসা করে শুধু, কিনে নেয় না। থ্রি পিসের দোকান প্রিয়া টেক্সটাইলের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. প্রিন্স জানান, মেলায় তাদের বেচাকেনা ভালো হলেও ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি।
মেলায় গৃহস্থালির টুকিটাকি পণ্যের কিছু দোকান রয়েছে। তাদের দোকানের বিক্রয়কর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেইখ্খা লন, বাইচ্ছা লন ক্যানভাস করে পণ্য বিক্রি করছে। রিলেক্স ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. ইব্রাহিম অভিযোগ করে বলেন, বাণিজ্যমেলার মতো জায়গায় গুলিস্তানের মতো ক্যানভাস করে পণ্য বিক্রি করা খুবই বেমানান এবং মেলার পরিবেশ নষ্ট করে। তিনি এসব ক্যানভাস করে পণ্য বিক্রি করা বন্ধের দাবি জানান।
মেলায় চাহিদামতো পণ্য নেই ও দাম বেশি বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন। রাজধানীর কলাবাগান থেকে আসা দ্বীপ চন্দ্র বলেন, মেলায় চাহিদামতো পণ্য পাইনি। নন ব্রান্ডের পণ্যের দাম বশি। অনেকেই খাবার খাওয়াকে মেলায় আসার একটা অংশ মনে করেন। তবে খাবারের দাম ও মান নিয়ে অনেকে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। মেলায় ঘুরতে আসা নলপাথর এলাকার আজমত হোসেন বলেন ‘এবার মেলায় চাহিদামতো পণ্য নেই এবং খাবারের মান ভালো নয়।
তাই যারা প্রথমে আসছেন, তারা শুধু ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে খেতে গিয়ে মূল্য নিয়ে ঝগড়া করতে হচ্ছে।’ মেলায় হাজী বিরিয়ানী নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বিরিয়ানীর স্টলগুলোর পরিচালনার সঙ্গে আসল প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এসব স্টল সিন্ডিকেটের লোকজন চালাচ্ছে।
মেলায় অতিরিক্ত দামে স্টল বরাদ্দ নিয়ে অনেকে অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাবার একটি স্টলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০ ফুট প্রস্থ ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যেের স্টল বরাদ্দ পেতে ইপিবির থেকে নেওয়া বরাদ্দে খরচ হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টাকা।
কিন্তু আমরা ওই স্টল চালাচ্ছি ১৪ লাখ টাকার চুক্তিতে। মূল মালিক ব্যবসা না চালিয়ে ৫ লাখ মুনাফা নিয়ে গেছে। এই মুনাফার জন্য ভালো মানের খাবার দিতে পারছি না, কারণ মসলার দাম বেশি, সব পণ্যের দাম বেশি, আর কর্মচারীদেরও খরচ আছে। অন্য একটি শাড়ির দোকানের কর্ণধারও একই তথ্য জানিয়েছেন।
এ ছাড়া মেলায় দেশী-বিদেশী পোশাক, জুতা, আসবাব, সাজসজ্জা ও প্রসাধনী জাতীয় পণ্যও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরকারি ছুটির দিনের ওপর নির্ভরশীল হলেও অনেকেই লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
বাণিজ্যমেলায় শুরুর ১০তম ও ১১তম দিন শুক্রবার, শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীর ঢল। সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে মেলায়। সন্ধ্যার পরও হাজার হাজার মানুষ মেলায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। মানুয়ের ¯্রােতে মেলায় প্রবেশের টিকিট চেক করতেই পারেনি চেকাররা। একপর্যায়ে প্রবেশ গেটে টিকিট চেক না করেই দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে মেলার টিকিট ইজারাদারি প্রতিষ্ঠান ডিপি ইনফোটেক এর অপারেশন ইনচার্জ এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার মেলায় এক লাখ ৬০ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছে, শনিবারও দর্শনার্থীর চিত্র ছিল একই।
সূত্রমতে, এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের ৩৬১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে ১৮টি বিদেশী স্টল রয়েছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা তাঁদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করছেন। আশা করা হচ্ছে এবারের মেলায় ৫শ’ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া যাবে, ইপিবি জানিয়েছে।