কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল চালু না হওয়ায় মাদক কেনা-বেচার আখড়া
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠায় রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ৩০ বছরেও সচল হয়নি। ৩০ বছর যাবৎ অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। তৈরি হয়েছে স্থানীয় মাদকসেবী ও কারবারিদের আখড়া। রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। ১৯৯৪ সালে ১৯ এপ্রিল তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম উদ্বোধন করেন। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরের ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ হয়।
তবে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সরেজমিন ঘুরে দেখা এবং একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টার্মিনালের প্রবেশ পথে কাঁদা ও পানি জমে আছে। দুই পাশে জঙ্গল। প্রধান গেটে পাশে কয়েকটি পরিত্যক্ত ট্রাক ও বাস দেখা যায়। একটু ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, টার্মিনাল ভবনের রুমগুলো তালাবন্ধ রয়েছে। টার্মিনাল কেন্দ্রিক বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও বাস-ট্রাক মালিকদের কাউন্টার ও অফিস রুমের সাইন বোর্ড রয়েছে। তবে পরিপাটি রুমের ভাঙা জানালার ভেতরে দেখে ধারণা করা যায়, তিন দশকেও ব্যবহার হয়নি রুমগুলো।
ময়লা-আবর্জনা হয়ে ধুলা-বালু জমে আছে। বিকল ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন লাখ লাখ টাকার সম্পদ। টার্মিনাল ঘিরে চতুর পাশে রাজবাড়ী পৌরসভা মালিকানাধীন ১৬০টি ছোট বড় দোকান রয়েছে। তবে অধিক অংশ দোকান বন্ধ দেখা যায়।
জানা যায়, রাজবাড়ী থেকে মোট ১০টি রুটে বাস চলাচল করে। এগুলো হলো রাজবাড়ী-ঢাকা, রাজবাড়ী-মধুখালী, রাজবাড়ী-বরিশাল, রাজবাড়ী-যশোর, রাজবাড়ী-বগুড়া, রাজবাড়ী-ফরিদপুর, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী- দৌলতদিয়া, রাজবাড়ী-রাজশাহী, রাজবাড়ী-বগুড়া। টার্মিনালের পাশে অবস্থিত এক চা ব্যবসায়ী বলেন, ত্রিশ বছর পূর্বে আমি ত্রিশ বছরের যুবক ছিলাম। বাড়ির পাশে টার্মিনাল হওয়ায় অন্য পেশা ছেড়ে এখানে দোকান দিয়েছি। কিন্তু বুড়া হয়ে গেলাম। তবুও টার্মিনাল চালু হলো না।
এই বয়সে কোথায় গিয়ে কি করব। তিনি আরও বলেন, রাজবাড়ী বাস টার্মিনাল যেন ভূতুড়ে পরিবেশ। দিনের আলোতেও ভয় করে। কারণ এই টার্মিনালে কোনো প্রকার যানবাহন প্রবেশ করে না। কাউন্টারগুলো ত্রিশ বছরেও খোলা হয়নি। দুই-একটি গাড়ি শুধু মেরামত করার জন্য নিয়ে আসে। যে কারণে পাশের দোকানগুলো বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। ১/২টি চায়ের দোকান এবং গ্যারেজ সচল রয়েছে। শুভ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের টার্মিনালটি এখনো চালু হয়নি।
এতে আমরা যারা লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ব্যবসা করতে আসছি, সেই ক্ষেত্রে আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। তিনি দুঃখ করে বলেন, টার্মিনাল মানে কি? বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন প্রকার গাড়ি আসবে। যাত্রীরা আসা-যাওয়া করবে। আর এখানে কোনো গাড়ি আসে না। তাহলে ব্যবসায়ীরা চলবে কি করে। একাধিক বাস মালিক বলছেন, বাইপাস সড়ক না থাকায় বাসগুলো শহরের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীরা শহরের স্টপেজগুলো থেকেই বাসে উঠতে চায়।
ফলে টার্মিনালটি প্রায় ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান আসবাব ও সরঞ্জামাদি। আর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, টার্মিনালের শৌচাগারটি দুই বছর ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে আছে। কেউ সেটি পরিষ্কার করে না। যে কারণে বাস শ্রমিকদের খুব দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাস টার্মিনালটি চালু হলে তাদেরও সুবিধা হতো।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, বাস মালিক সমিতির নেতা ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালটি চালু বা সচল করার ব্যবস্থা করা হবে।