ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফাইল্যা পাগলার মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফাইল্যা পাগলার মেলা

সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে এতিহ্যবাহী শাহসুফী হযরত ফাঁলুচান চিশতী ওরফে ফাইল্যা পাগলার মেলা জমে উঠেছে। প্রতিবছর বাংলা সনের পৌষ পূর্ণিমা অনুসারে দাড়িয়াপুর গ্রামে এ মেলার আয়োজন করা হয়। এ বছর মেলাটির ৭৬তম আসর শুরু হয়েছে।
গত বুধবার রাত থেকেই গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ফাইল্যা পাগলার মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। এলাকাবাসীর দাবি, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য এ মেলা মানেই আনন্দ-উল্লাস ও আনন্দে মেতে উঠার দিন। ১৫ দিনব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা থাকলেও এটি চলে মাসব্যাপী। এ মেলার দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার আগেই গ্রামের প্রায় সবার বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
এ মেলার মাধ্যমে বাঙালির পুরনো সংস্কৃতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দেখা মিলে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি জোয়াহেরুল ইসলাম মিয়াচান জানান, শত বছর পূর্বে বাসাইল উপজেলার দেউলি গ্রাম থেকে হযরত ইয়াসিন আলীর অনুসারী ফালু চান নামে এক ব্যক্তি বর্তমান মাজার স্থলে এসে বসবাস শুরু করেন। মৃত্যুর পর তাকে এখানেই সমাহিত করা হয়। এটি মানুষের কাছে ফাইল্যা পাগলার মেলা নামে সর্বাধিক পরিচিত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ‘মানত’ নিয়ে আসে। মোট কথা এটি সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলার স্থানে পরিণত হয়।
মেলা উপলক্ষে শিশু-কিশোরদের জন্য হরেক আয়োজন করা হয়। নানা রকমের দোকানের পসরা সাজানো থাকে। এ মেলার বিশেষ আয়োজন বিভিন্ন চিনির তৈরি (কদমা) বাতাসা, জিলাপি ইত্যাদি। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানতকারী তাদের মানতকৃত মোরগ, খাসি, গরু ও সিরনিসহ বিভিন্ন রকম পণ্যসামগ্রী নিয়ে নেচে নেচে ঢোল পিটিয়ে ‘হেল ফাইলা হেল ফাইলা, ফাইলা নাচে না আমি নাচি’ এই শব্দে মুখর করে তোলেন। মাঘ মাসের পুরো মাসব্যাপী এ মেলা চললেও মাঘী পূর্ণিমার দিন ও এর আগে ও পরেরদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শকের সমাগম হয়।
জানা যায়, বিগত ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি আকস্মিক বোমা হামলার কারণে কয়েক বছর মেলাটির অচলবস্থার পর ফের অসংখ্য ভক্ত, মানতকারী ও দর্শকদের আনাগোনায় পুনরায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে মেলাটি। দুটি বোমা বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত হয়। এ ছাড়া ১০ জন চোখ, হাত ও পা হারিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল। মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, প্রশাসনের অনুমতিক্রমে মেলা উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা এ মেলার আয়োজন করেছি। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। মেলা সম্পূর্ণ সিসি টিভির আওতায় নেওয়া হয়েছে।

×