ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

মারধর করে তিনতলা থেকে ফেলে দেয়া হয় তানিয়া আক্তারকে

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

মারধর করে তিনতলা থেকে ফেলে দেয়া হয় তানিয়া আক্তারকে

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশে গিয়ে নিজের অবস্থা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। ভাবেন জীবনটা হয়তো এবার বদলে যাবে। ঠিক সেই একই স্বপ্ন বুকে নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন তানিয়া আক্তার। 

কিন্তু তার অবস্থার পরিবর্তন এসেছে শারীরিক দিক দিয়ে তানিয়া এখন অচল, শপিং ব্যাগ বিক্রি করে চালাচ্ছেন অনেক বড় সংসার। 

সম্প্রতি দেশের এক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে আসেন তানিয়া আক্তার। চার বছর আগে স্বপ্ন বুকে নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরে এসেছেন পঙ্গু হয়ে। ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে ফিরতে বাধ্য হন তিনি।
 
তানিয়া আক্তার কে জিজ্ঞেস করা হয় আপনি বিদেশে গিয়ে এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যে আপনি তিন তলা থেকে লাফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কি এমন হয়েছিল? কেন নিয়েছিলেন আপনি এমন সিদ্ধান্ত? যদি সংক্ষেপে আমাদের গল্পটা বলেন... 
 
সেই উত্তরে তানিয়া আক্তার বলেন, 'আমি ২০১৩ সালে সৌদি আরব গিয়েছিলাম ওখানে আমি যাওয়ার এক সপ্তাহ পরেই আমার উপর অনেক নির্যাতন করা হয়।  

কোম্পানির ভিসা বলি তানিয়া আক্তার কে নিয়ে সেখানে কাজের লোক হিসেবে কাজ করানো হয়েছিল এবং যে বাড়িতে সে কাজ করত সেখানে তার উপর ভয়াবহ নির্যাতন চলে, কোম্পানির ভিসা দিবে বলে তার থেকে টাকা নিয়ে তাকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করায়। 

তানিয়া আক্তার আরো বলেন, 'আমার থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে বলেছে আমাকে হাসপাতালে ক্লিনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। কিন্তু আমাকে নিয়ে গৃহকর্মীর কাজ দিয়েছে। যাবার এক সপ্তাহ পরে আমাকে মারধর করতো খাবার দিত না। আমি ময়লা থেকে তুলে খাবার খেতাম বাথরুমের কল থেকে পানি খেতাম। আমাকে পানি খাওয়ার গ্লাসটা পর্যন্ত দিত না।' 
 
এই পর্যায়ে এসে উপস্থাপক তানিয়াকে জিজ্ঞেস করে, 'আপনি তাদের ভাষা বুঝতেন?'  

সেই উত্তরে তানিয়া জানায়, 'সে ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিল এবং তাদের ভাষা কিছুটা বুঝতো। তার সাথে একজন বাঙালি ছিল যে তাকে সেই ভাষা বুঝিয়ে দিত।' 

এক পর্যায়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তানিয়া সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে আবারো ফেরত দিয়ে যায় সেই বাড়িতেই। ফিরে আসার পর তানিয়ার উপর নির্যাতন বেড়ে যায় আরও বেশি। 

এই পর্যায়ে এসে তানিয়া জানান, সৌদি আরবে গিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন নি বরং নির্যাতন করে একপর্যায়ে  তাকে তিন তলা থেকে সেই বাড়ির লোকেরা ফেলে দেয় রাস্তায়। 

তানিয়া বলেন, 'আমাকে যখন ফেলে দিচ্ছিল আমি তার পা ধরে ফেলেছিলাম এবং তার ওয়াইফ এসে আমার হাতে লাথি মেরে আমাকে ফেলে দিয়েছিল। নিচে পড়ে যাওয়ার পর সৌদি আরবের একজন ড্রাইভার আমাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে থানায় দিয়ে আসে। এবং সেখান থেকে আমাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।' 

এই সময়ে এসে তানিয়া তার পরিচিত একজনের কথা বলেন এবং জানান, 'নয়ন ভাই না থাকলে আজকের এই পরিস্থিতিতে হয়তো আমি আসতে পারতাম না আমি হয়তো বাংলাদেশে কখনোই আসতেই পারতাম না এবং তিনি এখনো আমাকে সাহায্য করছেন। সরকারিভাবে আমি এখনো পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি।'
 
বর্তমানে তানিয়া বাসায় বসে শপিং ব্যাগ বানান এবং ১০০ শপিং ব্যাগ বানালে তাকে ১২ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। তানিয়ার বাবা নেই, তারা সাত ভাই বোন। শপিং ব্যাগ বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে তানিয়াকে। আহত তানিয়ার পায়ের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল পায়ের চিকিৎসা করাতে করাতে তার স্বামী অধৈর্য হয়ে দুই সন্তান রেখে তাকে ছেড়ে চলে যায়। 


সূত্রঃ https://www.youtube.com/watch?v=53OmRvlHPNQ

শিলা ইসলাম

×