সাবেক সেনা কর্মকর্তা
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর শোকের অধ্যায়। পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে সেনা কর্মকর্তারা নির্মমভাবে প্রাণ হারান। এই হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন অসংখ্য পরিবার। যারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে ছিলেন, তারা সহ্য করেছেন মানবেতিহাসের ভয়ঙ্কর নির্যাতন।
ভিকটিমদের একজন বর্ণনা করেন সেই ভয়াবহ দিনের কথা। সকাল ৮:৪০ থেকে শুরু করে পরবর্তী দিন পর্যন্ত নির্যাতনের যে নির্মম অভিজ্ঞতা তিনি ও তাঁর পরিবার সহ্য করেছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
তিনি জানান, “সেদিন আমার দুই ছোট মেয়ে, যারা মাত্র দেড় বছর ও পাঁচ বছরের ছিল, তাদেরসহ আমাদের পুরো পরিবারকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। ১০-১২ জন আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে আমি মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছি। কিন্তু সেই যন্ত্রণা আজও আমাকে তাড়া করে। আমরা শুধু বেঁচে আছি, কিন্তু সেই অভিজ্ঞতার ক্ষত আমাদের সারাজীবন বহন করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ছোট ঘরে বন্দি রাখা হয়েছিল। দুই দিন ধরে খাবার কিংবা পানি দেওয়া হয়নি। ওয়াশরুম ব্যবহার করার সুযোগও দেওয়া হয়নি। আমাদের সন্তানদের কান্নার শব্দে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। এমনকি তাদের পোশাক পরিবর্তনের সুযোগও ছিল না।”
ভিকটিম বলেন, “আমার ঘরের প্রতিটি জিনিস লুট করা হয়েছিল। বিছানা থেকে শুরু করে সমস্ত আসবাবপত্র টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়েছিল। এটা শুধু হত্যাযজ্ঞ ছিল না, ছিল সম্পদ লুট ও ধ্বংসেরও চিত্র।” আমরা প্রতিটি মুহূর্ত গুনছিলাম, এই বুঝি সেনাবাহিনী এসে আমাদের উদ্ধার করবে। কিন্তু কেউ আসেনি। এটা কি অপরাধ নয়? দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী ও সরকারের কোনো উদ্যোগ আমাদের বাঁচাতে পারেনি। তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে মাস্টারমাইন্ডরা আছে, তাদের শনাক্ত করতে হবে। আমাদের কষ্ট ও ক্ষতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আমাদের ওপর যে অন্যায় হয়েছে, তা যেন ভবিষ্যতে আর কারও সঙ্গে না ঘটে।”
সেদিন যারা শহীদ হয়েছেন ও যারা সার্ভাইভার, তাদের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়েছে। ভিকটিমরা চান, যেন এই ইতিহাসের নৃশংস অধ্যায় আর কোনো দিন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
রিফাত