অভিজাত সুপার শপগুলো নিচ্ছে দুধের স্বাদ
অভিজাত সুপার শপগুলো নিচ্ছে দুধের স্বাদ, শুভংকরের ফাঁকিতে নিঃস্ব খামারিরা। বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী ও মাইজদী এবং পাশর্^বর্তী লক্ষ্মীপুর ও ফেনী শহরের সুপার শপগুলো নিচ্ছে দুধের স্বাদ, অপরদিকে দিবারাত্রি পরিশ্রম করেও খামারিরা শুভংকরের ফাঁকিতে অহরহ হচ্ছে নিঃস্ব। এরই মধ্যে নোয়াখালীর পশ্চিম প্রান্তে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে চালু হয়েছে অভিজাত সুপার শপ ‘স্বপ্ন’।
এ ছাড়া রয়েছে করতোয়া, আলমাস, হানিডিউ, কেনাকাটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুশবু, মা ডেইরি ফার্মসহ কয়েকটি সুপারশপ। দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী খামারিরা লক্ষ্মীপুরের শেষ সীমানাসংলগ্ন যাতায়াতের সহজ পথ মজু চৌধুরী ঘাট দিয়ে ভোলা ও বরিশাল জেলার খামারিরাও কষ্টার্জিত দুধ নিয়ে এসে শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ছেন।
কোম্পানীগঞ্জের আব্বাস উদ্দিন খামারের ১৫টি গাভি থেকে প্রতিদিন দুধ মিলে প্রায় দুশ’ লিটার। এক বছর আগেও লিটারপ্রতি দুধ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করেছে ৫০ টাকার কাছাকাছি। খামার পরিচালনা খরচ বাড়বাড়ন্ত থাকলেও দুধের লিটার ওই ষাট-সত্তরের ছকেই আটকা। এ নিয়ে আব্বাস উদ্দিনের মনে যন্ত্রণার দহন। দুধের দামের এমন বেদনার সারথি আব্বাস উদ্দিন শুধু একা নন, সুবর্ণচর ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসহ সব প্রান্তিক খামারিরই একই নিয়তি।
খামারিদের যখন এমন বোবাকান্না, তখন অভিজাত সুপার শপগুলো লিটারে দাম বাড়িয়েছে ১০-১৫ টাকা। অথচ মাসখানেক আগেও লিটারপ্রতি তরল দুধের দাম ছিল পঁচাশি টাকা, এখন তা শতক ছুঁয়েছে। বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি বিদ্যুৎ, গ্যাস, প্যাকেজিংসহ সব খরচ আগের চেয়ে বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দুধের দামে।
খামারিরা বলছেন, কোম্পানিগুলো লিটারে ১০ টাকা বাড়ালেও প্রান্তিক খামারিকে দেওয়া হচ্ছে যৎসামান্য। দুধ উৎপাদনকারী নয়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানই বাড়তি মুনাফা লুটছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে প্রোটিনসমৃদ্ধ এ খাদ্য। এতে শিশুর পুষ্টি ঘাটতির শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
তরল দুধের দাম নতুন করে যেমন বাড়িয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো, তেমনি বাড়ানো হয়েছে গুঁড়া দুধের দামও। সঙ্গে বেড়েছে দুগ্ধজাত পণ্যের দাম।
বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধের প্যাকেটে লেখা দর যাচাই করে দেখা গেছে, তাদের নতুন দাম নির্ধারণে প্রতি লিটার শতক ছাড়াতেও দেখা যায়। এই দর আগের চেয়ে ১০ টাকার বেশি। এ নিয়ে দুই বছরের মাথায় তরল দুধের দাম লিটারে বাড়ল ২০ টাকার ঊর্ধ্বে।
মিল্কভিটা তাদের ওয়েবসাইটে লিটারপ্রতি তরল দুধ ৯০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্যাকেটজাত তরল দুধের দাম লিটারে ছিল ৮০ টাকা। ওই বছরই কোম্পানিগুলো ১০ টাকা বাড়িয়ে ৯০ টাকা করে। দুই বছর পর গত নভেম্বরে তরল দুধ লিটারে ১০ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।
দুগ্ধজাত যত পণ্য আছে, সবকটির দামও বেড়েছে। আধা লিটার মিষ্টি দইয়ের দাম এখন ১৩০ টাকা, যা দুই বছর আগে ছিল ৮০ টাকা। তিন বছর আগে এই দাম ছিল ৬৫ টাকা। ৫ বছর আগে ৯০০ গ্রাম ওজনের এক কৌটা ঘি বিক্রি হয়েছে কোম্পানিভেদে ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। এখন সেই ঘি ১ হাজার ৫০০ টাকা। মিষ্টি, আইসক্রিম, বাটার, লাবাং, ফ্লেভারড মিল্কসহ দুগ্ধজাত যত পণ্য রয়েছে, সবকটিই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা আরও বলেন, খামারিদের রক্ষা করাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে গোখাদ্যের দর অনুযায়ী দুধের দাম নির্ধারণ করা হবে। আগে ভর্তুকি দেওয়া হতো। সেটাও বিগত সরকারের আমলে বন্ধ করা হয়েছে। আমরা ভর্তুকি দেব। খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করব। খামারি যেন দুধের ন্যায্য দাম পান, এজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ছয় মাসে ৪০০ গ্রামের টিনজাত দুধের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বৃহত্তর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বাসিন্দা রাবিনাজ কবির বলেন, মাসে ৮ প্যাকেট দুধ কিনতেই খরচ হচ্ছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। দুই মাস আগেও এই খরচ ছিল ৮ হাজার টাকা। এক বছর আগে যে গুঁড়া দুধের প্যাকেটের দাম ৫৯০-৬০০ টাকা ছিল, তা এখন ৭৫০ টাকায় ঠেকেছে। পরিচিত ব্র্যান্ডগুলোর দাম প্যাকেট প্রতি ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী বাজারে দোকানি ফজল করিম বলেন, বর্তমানে ৪০০ গ্রাম টিনজাত বায়োমিল দুধ ৮১০ টাকা, ৪০০ গ্রামের টিনজাত ল্যাকটোজেন ৮২০ টাকা এবং ৪০০ গ্রাম টিনজাত ন্যান দুধ ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমাদের লাভ খুব সামান্য, যা করার কোম্পানি করে।