ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা

জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রায় পুলিশের বাধা যমুনায় স্মারকলিপি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ৮ জানুয়ারি ২০২৫

জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে পদযাত্রায় পুলিশের বাধা যমুনায় স্মারকলিপি

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিরপরাধ সদস্যদের মুক্তির দাবিতে বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের নিরপরাধ জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যমুনায় পদযাত্রা শুরু করেন পরিবারের সদস্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। তারা শাহবাগ পর্যন্ত গেলে সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করেন। পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় ঘটনাস্থলে।
জানতে চাইলে রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের পর যারা চাকরিচ্যুত হয়েছে ও চাকরিচ্যুত সদস্যদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করেন। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে কথা বলেছেন। 
তিনি বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের পর চাকরিচ্যুত ও কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করেন। তারা শাহবাগে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আটকে দেওয়া হয়।’
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, তাদের পক্ষ থেকে নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান। আর অন্যরা শাহবাগে অবস্থান করেন। 
বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া এ পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ আটকে দেয়। বিকেল পৌনে চারটা পর্যন্ত তারা শাহবাগ জাদুঘরের সামনে অবস্থান চালিয়ে যান বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর। তিনি বলেন, এ সময় শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজাভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে
বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাইকোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাইকোর্টে ৮৩ জনের খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে শুধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে এ মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্বর্তীকালে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত পুনরায় শুরুর দাবি উঠছে। গত ১৯ ডিসেম্বর অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
১৫ বছর আগে এই হত্যাকা- পুনঃতদন্তের জন্য গত ২৪ ডিসেম্বর আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যেই বুধবার সকাল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হতে থাকেন তখনকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের পরিবাররা।
তারা সেখানে মানববন্ধন করে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং কারাগারে থাকা সদস্যদের ‘অবিলম্বে’ মুক্তির দাবি জানানো হয়। পরে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিতে তার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১২টার পর তারা পদযাত্রা করে শাহবাগ মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

×