ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

নাটোরে ২৭৭ কিমি খাল পুনর্খনন

সুফল পাচ্ছেন কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর

প্রকাশিত: ২১:০৯, ৬ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২১:১৩, ৬ জানুয়ারি ২০২৫

সুফল পাচ্ছেন কৃষক

চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় পুনর্খনন করা খাল

নাটোর জেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) পানাসি প্রকল্পের অধীনে পুনর্খননকৃত ২৭৭ কিলোমিটার খালের সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষক। খাল পুনর্খনন করার ফলে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি ব্যবহার করে অল্প খরচে সেচ সুবিধার পাশাপাশি অধিক ফলন উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা।

একই সঙ্গে খালে সংরক্ষিত মাছ শিকারের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। এদিকে পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে খাল সংস্কার ও ভূগর্ভস্থ সেচ নালা তৈরির মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন করে অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিএডিসি বিভাগ।
বিএডিসি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত নাটোর জেলায় ২৭৭ কিলোমিটার খাল/খাড়ি পুনর্খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে শুধু চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলাতেই ১৮৬ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা হয়েছে। সিংড়ায় ১৫ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। জেলাজুড়ে ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে।

পুনর্খননকৃত খালের মধ্যে সিংড়া উপজেলায় তিশিখালী খাল, সোয়াইড় টু কদমা খাল, নিয়ামত খাল, শ্রীখ- খাল, বরবরিয়া খাল, লালপুর উপজেলায় গোপালপুর খাল, গুরুদাসপুর উপজেলায় বিলসা খাল, চাপিলা মির্জা মাহমুদ খাল উল্লেখযোগ্য। খাল পুনর্খননের ফলে জেলায় অতিরিক্ত ১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এক ফসলি জমিগুলো বর্তমানে তিন ফসলি জমিতে রূপ নিয়েছে।

এ ছাড়া, পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ সেচনালা তৈরি করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে সিংড়ার খালগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার ও খালে সংরক্ষিত মাছ শিকার করতে পারেনি স্থানীয়রা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর খালের সকল সুবিধা পাওয়ায় ও রাস্তা ব্যবহার করতে পারায় স্বস্তি ফিরেছে কৃষকের মাঝে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, জেলায়  কোথাও কোথাও খাল দখলের পাঁয়তারা করছেন স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা। যদিও সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন খাল দখল ঠেকাতে মনিটরিং চালিয়ে যাচ্ছে। সিংড়া উপজেলার হিজলী গ্রামের কৃষক রাকিব আল হাসান, আপেল, রবিউল ইসলাম, ছবিরন বিবি জানান, খাল পুনর্খননের সকল সুবিধা এখন ভোগ করতে পারছি। সেচ সুবিধা, মাছ শিকার, খালের পাড়ের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত সুবিধা ভোগ করতে পারছি।

জুলাই অভ্যুত্থানের আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালগুলো দখলে রাখায় এতদিন বঞ্চিত ছিল কৃষকরা। এখন আমরা সব সুবিধা পাচ্ছি। সিংড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদ জানান, সাবেক সরকারের আমলে অপরিকল্পিত ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে খাল পুনর্খনন করা হয়। সে সময় প্রভাবশালীদের দখল দারিত্বের কারণে কৃষকরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল। এখনো সাবেক সরকারের দোসর খাল দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে যা আমরা প্রতিহত করব।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন কর্পোরেশন নাটোর রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিএডিসির পানাসি প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্খননকৃত খালের মাধ্যমে জেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হচ্ছে। চলনবিলসহ বিভিন্ন উপজেলায় খালের পানি সংরক্ষিত রয়েছে এবং কৃষকরা অল্প খরচে জমিতে সেচ দিয়ে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছেন। 
জলাবদ্ধতা নিরসনের কারণে বোরো মৌসুমে সরিষার আবাদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুনর্খননকৃত খালে দেশী মাছের ব্যাপক উৎপাদন বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকের মাঝে হাঁস পালনের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।

×