
দিগন্তজুড়ে হলুদ সরিষা ফুল।
পাবনার চাটমোহরের বিলজুড়ে ও চলনবিলের মাঠে মাঠে হলুদ রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে। চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া, ছাইকোলা, বিলচলন, হরিপুরসহ উপজেলার মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। দু’চোখ যে দিকে যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। চলনবিলের মাঠে প্রকৃতি যেন সেজেছে আপন মহিমায়। এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে। দিগন্তজুড়ে হলুদ সরিষা ফুলে কৃষক স্বপ্ন বুনছে।
এখন সরিষা গাছে ফুল ধরেছে, আর কিছুদিন পরেই আসবে ফল। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেলে কৃষক সরিষায় ভালো ফলনের আশা করছেন। বিগত বছরের তুলনামূলক এ বছর সরিষার আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। তাছাড়া সময়মতো সার-কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সরিষার আবাদ করতে কৃষকের কোন প্রকার বেগ পেতে হয়নি।
চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পাকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘বিল থেকে দ্রুত বর্ষার পানি নেমে যাওয়ায় ও আবহাওয়া ভালো থাকায় সময়মতো আমি ৬ বিঘা সরিষার আবাদ করেছি। অনেক সুন্দর আবাদ হয়েছে। ভালো ফলন হবে আশা করছি। লাভোবান হবো।’
হান্ডিয়াল নবীন গ্রামের কৃষক মুকুল সরদার সে এ বছর সাড়ে ৫ বিঘা, দরাপপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান সেও ৪ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। সরিষা চাষ এখন লাভজনক হওয়ায় এলাকায় দিন দিন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ৬-৭ মণ হারে সরিষা ঘরে তুলতে পারবে বলে তারা জানান।
হাসুপুর গ্রামের কৃষক আজাহার আলী বলেন, ‘এ বছর তিনি ৭ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। সার বীজ কীটনাশক সেচ সহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সেই সাথে ন্যয্য মূল্য পেলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি লাভ হবে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ৬ থেকে ৭ মন বিঘাপ্রতি সরিষা উৎপন্ন হয়। বিক্রি হয় ২৮শ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা।’
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলনবিল অধ্যুসিত চাটমোহরে ৮ হাজার ৩৯৬ হেক্টর, ভাঙ্গুড়া ৬ হাজার ১৬০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর, সিংড়ায় ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর, তাড়াশ ৯ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ অঞ্চলে উন্নত ফলনশীল জাতের বারী-৯,১১,১৪,১৫,১৭,১৮, বিনা-৪, টরি-৭ জাতের সরিষার চাষ সহ স্থানীয় জাতের সরিষার চাষ হয়েছে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, উপজেলায় কয়েক দফা বন্যার পানি এলেও দ্রুত মাঠ থেকে পানি নেমে যায়। এ জন্য মাঠের মধ্যে জলাবদ্ধতা না থাকার কারনে অনেকেই সরিষা বীজ ফেলেছে সুবিধাজনকভাবে। তাই, এ বছর সরিষা আবাদ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে।
উপজেলায় এ বছর ৮ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর ২৪৬ হেক্টর সরিষা চাষ বেশি হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে উপজেলার ৫ হাজার কৃষককে সরিষা বীজ ও সার বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে। সরিষা চাষের পদ্ধতি ও পোকার আক্রমণ হলে কি করণীয় সে বিষয়ে কৃষককে সচেতন করেছেন।
এম হাসান