গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লিতে আগুন বিএনপি নেতা বহিষ্কার

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লীতে জমি ও পুকুর নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই সহোদরের ওপর হামলা এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এবং তার সমর্থক লোকজনের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং রাতে এ অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় রাজাবিরাট বাজারে ও গাইবান্ধা জেলা সদরে সমাবেশ হয়েছে। 
এদিকে সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট বরট্ট সাঁওতাল পল্লীর বাসিন্দা মৃত সুন্দর ম-লের দুই ছেলে ব্রিটিশ সরেন ও শৈলেন সরেনের সঙ্গে ওই ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের সঙ্গে জমিজমা ও পুকুর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।

এরই জের ধরে শুক্রবার সকালে ইউপি চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে সুন্দর ম-লের বাড়িতে হামলা করে। পুকুর ও জমির দখল ছেড়ে না দেওয়ায় চেয়ারম্যানের লোকজন সাঁওতাল নারী ফিলোমিনা হাসদা (৫৫) ও ব্রিটিশ সরেনকে মারপিট করে এবং তার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। 
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এর সূত্র ধরে ওইদিন গভীর রাতে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের লোকজন ব্রিটিশ সরেন ও তার ভাই শৈলেন সরেনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনের খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। মারধরের শিকার ওই নারী ও ব্রিটিশ সরেনকে আহত অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শনিবার দুপুরে গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) এ বি এম রশিদুল বারী ও গোবিন্দগঞ্জ থানার পরিদর্শক ইকবাল পাশা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় শনিবার রাতে চেয়ারম্যানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে।
এদিকে সাঁওতাল নারীকে মারধর ও বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাহামুদুন নবী টিটুল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

রফিকুল ইসলাম গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য ও রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। চিঠিতে জানানো হয়, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবিতে রাজাবিরাট বাজারে একটি মানববন্ধন করেছেন সাহেবগঞ্জ ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। একই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার গাইবান্ধা জেলা শহরে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে শহরের ডিবি রোডে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে ‘আদিবাসী’ সাঁওতাল ও বাঙালিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। 
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জনউদ্যোগ, এএলআরডি এবং গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. ফিরিমন বাস্কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন, পরিবেশ আন্দোলন সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ গাইবান্ধার সদস্যসচিব প্রবীর চক্রবর্তী, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, নারীনেত্রী সাজেদা পারভিন রেনু, নাজমা বেগম রিকতু প্রসাদ, ভুক্তভোগী শ্যামবালা, ব্রিটিশ সরেন, সাঁওতাল নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, সুচিত্রা মুরমু তৃষ্ণা প্রমুখ। 
তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সাঁওতালদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।