ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

ক্ষতিগ্রস্ত চারটি তলা বাদে বাকি পাঁচটি তলায় অফিস শুরু

অগ্নিকাণ্ডের পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে সচিবালয়

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

অগ্নিকাণ্ডের পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে সচিবালয়

অগ্নিকাণ্ডের ১১ দিন পর খুলে দেওয়া হলো সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন

অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। খুলে দেওয়া হয়েছে সচিবালয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবন। শুরু হয়েছে গাড়ি প্রবেশ। লোকসমাগমও বেড়েছে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ৯ তলাবিশিষ্ট ৭ নম্বর ভবনের পুড়ে যাওয়া চারটি তলা ছাড়া বাকি পাঁচটি তলায় অফিস শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে রবিবার সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন পরিদর্শন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান। সেখানে তিনি বলেন, আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে পুড়ে যাওয়া ৭ নম্বর ভবনের চারটি ফ্লোরের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। 
আগুন লাগার পর থেকে উপদেষ্টা এবং সচিব ছাড়া অন্য কারও গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। রবিবার থেকে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাড়িও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। আগুন লাগার ১১ দিন পর অনেকটাই স্বাভাবিক হলো সচিবালয়।
আগুন লাগার পর থেকে ৭ নম্বর ভবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার দেখা গেছে, ভবনটিতে সবাই প্রবেশ করতে পারছেন। তবে ৫ম তলার পর (উপরের ফ্লোরগুলোতে) গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
৫ম তলায় পূর্ব পাশে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পশ্চিম পাশে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ভবনের ৪র্থ তলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, ৩য় তলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, দ্বিতীয় তলায় স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন।
সাত নম্বর ভবনের দুইতলায় উঠতেই পোড়া গন্ধ নাকে লাগে। মেঝেতে ছাইয়ের ছোপ ছোপ কালো দাগ। বন্ধ আছে লিফট। পাঁচতলা পর্যন্ত উঠতে দেখা গেল, চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। তবে ভবনে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, চারটি তলার মেঝে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ফ্লোরগুলোর কলাপসিবল গেট তালা দেওয়া রয়েছে। এই চারটি ফ্লোরের সিঁড়ি একেবারে ধসে গেছে। কোথাও কোথাও খসে পড়েছে দেওয়াল। চারটি তলার মেঝেজুড়ে এখন ধ্বংস্তূপ।
গত ২৫ ডিসেম্বর  রাতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আগুন লাগার ঘটনায় পুড়েছে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলা। এ চার তলায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অফিস ছিল।
২৫ ডিসেম্বর  রাত ২টার কিছু আগে আগুন লাগে, ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগুন পুরোপুরি নিভতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে,  বৈদ্যুতিক ‘লুজ কানেকশন’ থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত।
এদিকে রবিবার সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন পরিদর্শন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৭ নম্বর ভবন পরিদর্শনে এসে সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে সচিবালয়ে পুড়ে যাওয়া ৭ নম্বর ভবনের চারটি ফ্লোরের সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। 
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চারটি ফ্লোরে সংস্কার কাজ শেষ করতে ১০ থেকে ১২ দিন লাগবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা করে দিতে পারব ইনশা আল্লাহ। আমাদের প্রকৌশলীরা বলেছেন, তারা ১০-১২ দিনের মধ্যে ঠিক করে দিতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করব, যত তাড়াতাড়ি সংস্কার কাজ শেষ করা যায়। তিনি বলেন, ৭ নম্বর ভবনে এখনো পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি রবিবারের মধ্যে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বলা হচ্ছে  বৈদ্যুতিক ‘লুস কানেকশন’ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হামিদুর রহমান খান বলেন, এটা অন্য জিনিস, এটা এখানে আলোচনার বিষয় নয়। এই লুজ কানেকশনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে গণপূর্ত সচিব বলেন, সেটা তদন্ত কমিটি করবে।

×