ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ১২ পথশিশুর পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ যুবকের

প্রথম আয়ের টাকা মানবতার সেবায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ০০:২৭, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

প্রথম আয়ের টাকা মানবতার সেবায়

দৌলতদিয়ায় যৌনপল্লীর শিশুদের শীতবস্ত্র দিলেন যুবক

কর্মজীবনের প্রথম ৩ মাসের বেতনের টাকায় নতুন একশ’ পোশাক কিনে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শীতার্ত অসহায় ও পথশিশুর মাঝে বিতরণ এবং উন্নতমানের খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন টুটুল নামের এক যুবক। এ সময় তিনি আগামী এক বছরের জন্য বাবা-মা হারা ১২ পথশিশুর পড়ালেখাসহ লালন-পালন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  
টুটুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে পড়ালেখা শেষ করেছেন। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তবে বাবার কর্মস্থল ঢাকার গাবতলী এলাকায়। সেই হিসেবে ছোট বেলা থেকে ঢাকায় বড় হয়ে ওঠেন। বাবা-মা পড়ালেখা করেনি। যে কারণে ছাত্র জীবনে সংগ্রাম করে পড়তে হয়েছে। প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার চালিয়ে পড়ালেখার ব্যয় বহন করতে হয়েছে তাকে। ছোট দুই ভাইবোনসহ সহযোগিতা করেছেন পরিবারকে।

শুধু পরিবারের নয় প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারের আয়ের সিংহভাগ দিয়ে গরিব অসহায় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার ব্যয় বহন করেছেন। টুটুল নিজে মেডিক্যালে পড়তে না পাড়লেও আয়ের টাকায় বর্তমান একটি অসহায় মেয়েকে মেডিক্যালে পড়াচ্ছেন। একজন পথশিশুকে আরবি পড়ালেখা করাচ্ছেন। 
টুটুল ‘ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে’ শিক্ষা জীবনে টিফিনের টাকা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন অসহায় ও পথশিশুদের মাঝে। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিত্তবান বন্ধু ও দানশীলদের সহযোগিতা নিয়েছেন। অসংখ্য অসহায় শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। জোগান দিয়েছেন বিভিন্ন প্রকার একাডেমিক বইয়ের।  ‘দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে বসবাসরত ছয়শতাধিক শিশু ঝুঁকিতে’ শিরোনামে একটি খবর গত ১৮ অক্টোবর ২০২৪ দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশ হয়।

এই খবরটি নজরে আসে টুটুলের। সেই খবরের সূত্র ধরে অসহায় এ পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করার কথা চিন্তা করেন তিনি। কিন্তু সময় ও অর্থের অভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি। ২০২৫ সালের শুরুতে নিজের বেতনের টাকা ব্যয় করে উন্নতমানের শীতের একশ’ পোশাক নিয়ে ছুটে আসেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে। তবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর শিশুদের মধ্যে দরিদ্র অসহায় এবং কিছু পথশিশুর তালিকা করেন তিনি। বছর শুরুতে এ সকল অসহায় ও পথশিশুর মাঝে নতুন শীতের পোশাক তুলে দেন। এ সময় ১২ জন শিশুর এক বছরের পড়ালেখাসহ লালন পালনের সকল প্রকার দায়িত্ব নেন তিনি।  
টুটুল স্কুল জীবন থেকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ালেও থেকেছেন প্রচারবিমুখ। নীরবে অসহায় মানুষের সেবা করেছেন। অসহায় মানুষের সেবা করার নেশায় এখনো পর্যন্ত বিয়ে করা হয়নি তার। প্রথম দিকে বাবা-মা ও বন্ধু-বান্ধব পাশে না থাকলেও এখন অনেকে তাকে উৎসাহ দেন। অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেক বন্ধু সহযোগিতা করছেন। নুর রহমান জিতু নামে টুটুলের এক বাল্য বন্ধু বলেন, আমার বাবা ও আমার অনেক আছে।

কিন্তু টুটুলের মতো সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার মন হয়তো নেই। আমি টুটুলের পাশে এখন দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। কারণ সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে যে এত আনন্দ সেটা আগে বুঝিনি। টুটুল অনেক আগে সেটা বুঝেছে। তিনি বলেন, টুটুলের টাকায় একজন মেডিক্যালে পড়ছে ও একজন পথ শিশু আরবি পড়ছে। কিন্তু আমার অনেক থাকার পরও আমি সাধারণ মানুষের জন্য কি করতে পেরেছি। আমি প্রতিটি মুহূর্ত টুটুলের কাছ থেকে শিখছি। টুটুলের মানব সেবার বহরে নিজেকে যুক্ত হওয়ার অঙ্গীকার করছি। 
টুটুল বলেন, দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সচিত্র প্রতিবেদন আমাকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উৎসাহ দিয়েছে। আমি আশা করব পত্রিকাটি দেশের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা মানবিক স্টোরিগুলো লেখনির মাধ্যমে সবার সামনে তুলে ধরবে।  তিনি বলেন, অসহায়দের জন্য কিছু করতে পারলে নিজের কাছে ভালো লাগে। প্রথমে আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব মানুষের পাশে দাঁড়ানো ভালোভাবে নেয়নি। তবে, এখন সবাই পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি চেষ্টা করব কর্মের পাশে অসহায় ও পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানোর।

×