ছবি: সংগৃহীত
কৃষকরা শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমে চরম দুরবস্থার মুখোমুখি। বগুড়ার হাট-বাজারে ফুলকপি ২ টাকায় ও মুলা ৩ টাকা কেজিতে, যা উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। দাগওয়ালা সবজির দাম নেমে এসেছে আরও নিচে। বাঁধাকপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায়। তবে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কম।
মহাস্থান হাটে সরজমিনে দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে সবজি নিয়ে কৃষকেরা হাটে হাজির হলেও ক্রেতার অভাবে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে নামমাত্র দামে। ৭ দিন আগেও যেখানে ফুলকপি বিক্রি হতো ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে, এখন তা ৩ থেকে ৫ টাকায় নেমে এসেছে। মুলার দাম কমে গিয়ে হয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৫ টাকা কেজি। বাঁধাকপির অবস্থা আরও খারাপ, প্রতি পিস ৮ থেকে ২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকেরা জানাচ্ছেন, শীতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা এই সবজি ফলিয়েছেন, কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। এক কৃষক জানান, ২১ মণ ফুলকপি ২৩০০ টাকায় বিক্রি করেও তার ১০০০ টাকা ভ্যান ভাড়ায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে তারা লোকসানের বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার শীতকালীন সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। বগুড়ায় প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে তিন লাখ টনেরও বেশি সবজি চাষ হয়েছে। তবে বেশি সরবরাহের কারণে বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় কৃষকেরা সমস্যায় পড়েছেন। একেকটি ফুলকপি উৎপাদনে যেখানে খরচ পড়ছে ৬ টাকার বেশি, সেখানে তা বিক্রি করতে হচ্ছে ৩ টাকায়।
মহাস্থান হাটের পাইকাররা বলছেন, এ বছর সরবরাহ অতিরিক্ত হওয়ায় সবজি পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। ৭ দিন আগেও মুলা ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে এবং ফুলকপি ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন সেই দাম ৫ টাকার নিচে নেমে এসেছে। অন্যান্য সবজির দামও কমেছে। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে, কাঁচামরিচ ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়, শিম ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় এবং টমেটো ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছিলেন। এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় সরবরাহের চাপ বেড়েছে এবং বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। তিনি আশাবাদী, মৌসুম শেষে কৃষকেরা কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
সুপ্রের বগুড়া শাখার সম্পাদক কেজি ফারুক বলেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের বিশাল ব্যবধান কৃষকদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। তিনি মনে করেন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কৃষকেরা তাদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে জানান, মৌসুমের শুরুতে মুলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে এবং ফুলকপি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন তা নেমে এসেছে ৩ থেকে ৫ টাকায়। উৎপাদন খরচও উঠছে না, ফলে তারা লোকসানের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এম.কে.