ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

চট্টগ্রামে গোলটেবিল বৈঠকে সারজিস

৭১ সালে নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ভারত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

৭১ সালে নিজেদের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় ভারত

নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম

একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, নিজেদের স্বার্থ হাসিলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ভারত। এখন খুনি হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে নতুন করে এদেশের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। 
শনিবার নগরীর পলোগ্রাউন্ড কনফারেন্স হলে ‘ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যা সমাধান ও বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি কথাগুলো বলেন। বৈঠকটি আয়োজন করে চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এতে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম, নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম এবং সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ। সারজিস আলম বলেন, এ প্রজন্ম বিবেক বিক্রি করে দেওয়া প্রজন্ম নয়।

এ প্রজন্মকে সত্য ও ন্যায় দিয়ে প্রাসঙ্গিকতা বুঝাতে পারলে রক্ত এবং জীবন দেবে। লুটপাট, অর্থপাচার, চাপাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করলে এ প্রজন্ম ছুড়ে ফেলবে। ভারতের আধিপত্য প্রতিরোধ করতে চাইলে এ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে কীভাবে আধিপত্য করছে। ১৬ বছরে জোর করে কীভাবে দেশের মানুষের ওপরে আধিপত্যবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা বোঝাতে হবে। শুধু রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নয়, কীভাবে দেশের প্রতিটি সিস্টেমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভারতের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের মনিবের কাতারে নিয়ে  গেছে। নিজেরা স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করেছেন, শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে সিকিউর করার জন্য। তাদের কাছে দেশ, দেশের মানুষ, সার্বভৌমত্বের চেয়ে ক্ষমতার মূল্যটা বেশি ছিল। যে  কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। খুনি হাসিনা একটি অডিও রেকর্ডে নিজেই বলেছেন, ‘যেহেতু আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি খুনের মামলা হয়েছে, সেহেতু ২২৭টি খুন তো করাই যায়’। অর্থাৎ এই রক্তপিপাসু খুনির খুনের পিপাসা এখনো শেষ হয়নি।

এই খুনির বিরুদ্ধে অন্তত ২ হাজার খুনের মামলা হওয়ার কথা ছিল, হয়েছে মাত্র ২২৭টি । বিন্দুমাত্র অনুশোচনা না করে খুনের কথা মুখে নিয়ে আসছে। এই খুনি গণভবনের কক্ষে ১৫ আগস্টে যারা নিহত হয়েছে তাদের ছবি রাখত, যাতে রাতে ঘুমানো সময়,  ঘুম থেকে উঠে খুনের পিপাসা, রাগ-ক্রোধ এগুলো যেন জীবন্ত থাকে। 
তিনি আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর টুইটার পোস্টে দেখেছি তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করছে। তারা  ভেতরে ভেতরে এটা বিশ^াস করত, তারা এখন প্রকাশ করছে। তারা পরোক্ষভাবে এবং অনেকক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের ওপর এ বিশ^াসটা চাপিয়ে  দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমাদের এখন কাজ হচ্ছে, এ যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা নতুন যেকোনো যুক্তি, তথ্য  নেওয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত; ভালো কিছু গ্রহণ করার জন্য খারাপ ছুড়ে ফেলার জন্য তাদেরকে বোঝাতে হবে- একটা দেশ কোনোদিন দুটা দেশের মধ্যে এমনি এমনি চলে আসে না। একটা দেশ কখনো আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এতটা উদার হয় না, যে দুটা দেশের যুদ্ধের মাঝে অংশগ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে দ্বিখ-িত করার অন্তর্নিহিত ইচ্ছার বহির্প্রকাশ হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারত করেছে। শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, ভারত তাদের সেভেন সিস্টার্সকে সেইভ করার জন্য কীভাবে তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৭১ এর আগে পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে সেভেন সিস্টার্সে বিদ্রোহে থাকত। সেই সেভেন সিস্টার্স সংলগ্ন যখন পাকিস্তানের একটি বড় অংশ ছিল, তখন ভারত এটা ভয় পেত যে, আমি না দ্বিখ-িত হয়ে যাই।

ভারত নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুদ্ধে এসেছে, তখন এ দেশের সবচেয়ে বড় থ্রেটের সম্মুখীন হলো আমাদের সার্বভৌমত্ব। সেই থ্রেট ১৯৭১ থেকে শুরু করে ২৪ এর পরবর্তী অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছিল। আধিপত্যবাদ খ-ন করতে চাইলে যেসব প্যারামিটার দিয়ে সেগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো ভাঙতে হবে। দুই চারবছর পর বা ১০ বছর পর যদি আধিপত্যবাদের সহযোগী অন্য কেউ যে কেউ ফর্মে আসে, তাহলে এটা আবার গড়ে তোলার চেষ্টা করবে।

আমরা  যে যার জায়গা থেকে পারি একাত্তরের সময় ভারতের যে ভূমিকা আমাদের স্বার্থে ও ভারতের স্বার্থে ছিল তা স্পষ্টভাবে লেখা, কথা ও চিন্তায় তুলে ধরি। ৭২ এর শুরুর দিকে ভারতের সৈন্যরা আমাদের দেশে লুটপাট করেছে। 
বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষপটে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম উল্লেখ করে সারজিস বলেন, চট্টগ্রাম নিয়ে অপচেষ্টা দেখানো যেতে পারে বন্দর নিয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে। অপচেষ্টা করানো যেতে পারে ভূমির দিক থেকে,  বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যেও। ধর্মীয় বিষয় নিয়ে। চট্টগ্রামে পাহাড়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তারা, আবার চট্টগ্রামে আলিফকে হত্যা করা হয়েছে খুনি ও ফ্যাসিস্টদের নীল নকশায়। এসব ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করেছি। ভারত বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনগুলো চালিয়েছিল। এর মধ্যে হিং¯্র ও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি।

আমরা যা খাই, পড়ি, বলি এবিষয়গুলো আমাদের সংস্কৃতির অংশ। আমাদের মায়েরা বোনেরা বাসায় বসে বসে টিভি সিরিয়াল দেখে। বাংলাদেশে যে বিদেশী চ্যানেলগুলো এর ৯০ ভাগ ভারতের। বিপরীতে দেখেন, ভারতে তারা বাংলাদেশের একটি চ্যানেলও প্রচার করতে দেয় না। 
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মো. রেজাউল করিম বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ভারতসহ দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা এবং দেশ অশান্ত করার প্রতিবাদ জানাতে হবে। ৫৩ বছরে আমরা দেখেছি অনেকে রাজনীতি ও ক্ষমতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থের অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এর পরিবর্তন দরকার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ পর্যন্ত এ ব্যানারে সংসদে একজন ব্যক্তিও যাননি। আমাদের যাওয়ার সুযোগ ছিল। না যাওয়ার কারণ হল, আমরা রাজনীতি করি ইসলাম, দেশ ও মানবতার কল্যাণের জন্য। ৫৩ বছর যারা শাসক ছিল তারা সবাই ভারতের গোলামি করেছে।

×