ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

পর্যটনে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

‘রামরাই দীঘি’- দিনভর ওড়াউড়ি নানান রঙের অতিথি পাখির

আব্দুল্লাহ আল নোমান, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৩:১১, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

‘রামরাই দীঘি’- দিনভর ওড়াউড়ি নানান রঙের অতিথি পাখির

রাণীশংকৈলে অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য রামরাই দীঘি

অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত রাণীশংকৈলের ‘রামরাই দীঘি’। শীতপ্রধান দেশ থেকে বহু মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের এই দীঘিতে এবারও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এসেছে। সারাদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে বেড়ায় অতিথি পাখির দল। সন্ধ্যা নামতেই দীঘিপাড়ের লিচু বাগানে আশ্রয় নেয় এরা। পাখিগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আকর্ষণীয়। তাদের মুহুর্মুহু কলতানে চারপাশ মুখরিত হয় অভাবনীয় মুগ্ধতায়। 
প্রাচীন ঐতিহ্যের এক অন্যতম নিদর্শন এই রামরাই দীঘি। এটি বরেন্দ্র ভূমিতে প্রাচীন জলাশয়গুলোর মধ্যে আয়তনে দ্বিতীয় বৃহত্তম। দীঘিটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। ১৮.৩৪ একর সুউচ্চ পাড় ও ২৩.৮২ একর জলভাগসহ মোট ৪২.২০ একর আয়তন বিশিষ্ট এই দীঘি। এর দৈর্ঘ্য (উত্তর-দক্ষিণে) ৯০০ মিটার ও প্রস্থ (পূর্ব-পশ্চিমে) ৪০০ মিটার। আয়তন প্রায় ৪২ একর। এর সঠিক ইতিহাস এখনো জানা যায়নি। 
ধারণা করা হয়, দীঘিটি পাঁচশ’ থেকে হাজার বছরের পুরনো হতে পারে। এক সময় এই দীঘি ছিল এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের পানির চাহিদা পূরণের উৎস। দীঘিটিকে ঘিরে নানান লোককথা শোনা যায়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে রামরাই দীঘির নামকরণ করা হয় রানী সাগর। তবে, লোকমুখে এটি রামরাই দীঘি নামেই পরিচিত। 
এর চারপাশে প্রায় ১২শ’র অধিক লিচু গাছসহ অন্যান্য গাছ লাগানো হয়েছে। চারদিকে যেন সবুজের বিশাল সমারোহ আর দীঘির টলমলে জলরাশি মুগ্ধ করে দর্শণার্থীদের। প্রতিবছর শীত মৌসুমে ডিসেম্বরের শেষদিকে ও জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে উত্তর মেরু, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, হিমালয়ের পাদদেশ ও তিব্বত অঞ্চল থেকে রামরাই দীঘিতে দলে দলে আসে পাখি।

এদের মধ্যে রয়েছে- সাদা বক, বালিয়া, পানকৌড়ি, ঘুঘু, সারস, রাতচোরা, গাংচিল, পাতিহাঁস বুনোহাঁস, খঞ্জনা, ওয়ার্বলার, হাড়গিলা, স্নাইপ বা কাদাখোঁচা, কোকিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার অতিথি পাখি। তাদের আগমনে রামরাই দীঘির সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেকখানি- যা পাখিপ্রেমিক ও পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করে। 
পাখিদের কলকাকলি শুনতে দূর-দূরান্ত থেকে রামরাই দীঘিতে ছুটে আসেন পাখি প্রেমীরা। এখানে পাখি আসার মূল কারণ খাদ্য সংগ্রহ। উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ পরিযায়ী পাখি বসন্তকালে দক্ষিণে আসে খাদ্যের প্রাচুর্যের কারণে। মার্চ মাসের শেষদিকে আপন আপন গন্তব্যে ফিরে যায় এসব পাখি। 
ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে রামরাই দীঘিকে নান্দনিক রূপ দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীঘির পাড়ে চারদিকে দর্শণার্থীদের বসার জন্য গোল আকৃতি দুটি ছাতার ছাউনি ও পাঁচটি বসার বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো দীঘির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটি নৌকা রয়েছে। এ ছাড়া, উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি কাঠের ব্রিজ করা হয়েছে। রামরাই দীঘিটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে দেশের পর্যটন খাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 
স্থানীয় পাখিপ্রেমিক শেখ মেহেদী, শহীদুল ইসলাম রকিসহ বেশ কয়েকজন জানান, রামরাই-দীঘি এলাকাটি নির্জন। দর্শণার্থীদের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের তৎপরতা প্রয়োজন। প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের শুরুতে দেশি পাখি ছাড়াও অতিথি পাখি এসেছে। কয়েক মাস থাকার পর শীতের শেষে আবার পাখিরা ফিরে যাবে নিজ নিজ দেশে। কিছু পাখি সারাবছরই থেকে যায়। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, রামরাই দীঘি অতিথি পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। পাখি শিকারের কোনো সুযোগ নেই এখানে। কেউ যদি পাখি শিকার করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×