ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

যমুনায় জাগছে অসংখ্য চর

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

যমুনায় জাগছে অসংখ্য চর

যমুনায় জেগে ওঠা চরে চলছে ঘোড়ার গাড়ি

শুষ্ক মৌসুমে প্রমত্ত যমুনায় জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এঁকেবেঁকে জেগে ওঠা এই চরে কৃষকরা চাষাবাদ করছেন। বালিয়াড়ির বুকে ঘোড়ার গাড়ি চলে। অপরদিকে যমুনায় নাব্য হ্রাস পাওয়ায় নৌ চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্ন হচ্ছে।  জাহাজ তো নয়ই পণ্যবাহী নৌকা চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।  যমুনার পরিধি এখন ক্ষীণকায়। বর্ষা মৌসুমে সিরাজগঞ্জ জেলা সীমানায় যমুনার পরিধি ৮-১০ কিলোমিটার হলেও শুষ্ক মৌসুমে তা দাঁড়িয়েছে  দুই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে।

যমুনার বিভিন্ন অংশে অসংখ্য চর ও ডুবোচর জেগে ওঠায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরগামী রাসায়নিক সার, জ্বালানি তেল ও পণ্যবাহী কার্গো চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সঠিক সময়ের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে আপদকালীন রাসায়নিক সার মজুত ও জ্বালানি তেল সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি প্রবাহ কমে একের পর এক চর জেগে ওঠা যমুনায় খেয়াঘাট থাকছে না। খেয়া পারাপারে মাল্লাদের অলস সময়। কেউ চলে যাচ্ছে ভিন্ন পেশায়। স্বজনদের বলে যাচ্ছে, যমুনা ভরে উঠলে ফিরবে ঘাটে। প্রতিদিন অন্তত সাড়ে ৩শ’ নৌকা যমুনার ঘাটে ঘাটে ভিড়ত। সেখানে এখন চরের নিধুয়া পাথার। চলতি বছর শুকনো মৌসুমের শুরুতেই যমুনার পানি নিত্যদিন অস্বাভাবিক হারে কমে চর জেগে উঠছে। এক চর থেকে আরেক চরে পৌঁছতে ট্রানজিট করতে হয়। প্রকৃতি দিনে দিনে নৌপথ বন্ধ করে দিচ্ছে। যমুনায় জেগেছে অসংখ্য চর। ডুবোচর পড়ে নদী শুকিয়ে খেয়া পারাপার বন্ধ হয়ে গেলে দূরের চরগ্রামের মানুষকে যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর তীরবর্তী চৌহালী, শাহজাদপুর, বেলকুচি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার অধিকাংশ স্থানে চর ও ডুবোচর জেগে উঠেছে। ভরা মৌসুমে যেখানে পানিতে ভরপুর ছিল আজ সেখানেই জেগে উঠেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। জেগে ওঠা এ জমির মালিকেরা বালুচরে বাদাম, কলাই, সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। ফসল চাষের জমি জেগে উঠলেও যমুনার সৌন্দর্য বিনষ্ট হচ্ছে।
কারণ সম্পর্কে বিশিষ্টজনেরা বলছেন, সময়মতো যমুনা নদী খনন না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, শীত এলেই নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠে চর ও আবাদি জমি। এসব জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকে। এখন যমুনায় অসংখ্য চর ও ফসলি জমি জেগে উঠেছে এবং যোগাযোগের ব্যবস্থাও খারাপ। এ ছাড়া পানি কমে যাওয়ায় নৌ-শ্রমিক এবং জেলেরা এখন প্রায় বেকার।
বর্ষাকালে যমুনা নদী তার যৌবন ফিরে পায়। এ নদী শীতকালে পানিশূন্য থাকে। নদীর বিভিন্ন স্থানে এখন চর জেগে উঠেছে। এ কারণে যমুনা নদীতে স্রোতও নাই। ভাঙন এলাকার কোথাও এখন ভাঙনও নেই। এখন সরিষা, বোরো, ভুট্টা, খেসারি ও চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসল চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। জেলার চৌহালীর যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর। এ কারণে ক্ষীণ হয়ে এসেছে নদী। এ ছাড়া নদীর মাঝে নতুন নতুন চর জেগে ওঠায় । শুষ্ক মৌসুমে যমুনায় নাব্য হ্রাস পাওয়ায় এখন প্রস্থ দুই কিলোমিটার থেকে তিন কিলোমিটার। যা বর্ষায় থাকে প্রায় সাড়ে ৮ থেকে ১০  কিলোমিটার। যমুনার বুক জুড়ে কৃষকরা এখন সরিষা, বোরো, ভুট্টা খেসারি কালাই ও চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসল চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সিরাজগঞ্জ, চৌহালী ও এনায়েতপুর নৌ-ঘাটের শ্রমিকেরা জানান, ঘাটে তারা শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা চালায়। শীতকালে যমুনা নদী বিভিন্ন স্থানে নালায় পরিণত হয়েছে। নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। অনেকটাই বেকার সময় কাটে। এ জন্য অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তাও করছে তারা।
জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যমুনা নদীতে নেমে আসে বালু। ফলে নদীর মাঝে তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। এ কারণে বর্ষায় যমুনার পানি ফুলে ফেঁপে উঠে পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দেয়। অপরদিকে শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় নৌ-পরিবহনে দুর্ভোগ বেড়ে যায়। প্রতিবছর যমুনার তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য।
একসময় দূর-দূরান্ত থেকে নৌ-পথে সিরাজগঞ্জ, বেলকুচি, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে ব্যবসায়ীরা আসত বাণিজ্য করার জন্য। সেই দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। সেই সঙ্গে তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সহজেই দু’কূল ছেপে বন্যা আসে। ভাঙে আবাদি জমি, ঘর-বাড়ি। নিঃস্ব হয় শত শত পরিবার। তাছাড়া, পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করত, তারা আজ অসহায়। নদীতে নেই আর আগের মতো মাছ। জেলেরা পেশা বদল করে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।
চৌহালী উপজেলার নৌকা ঘাটের ইজারাদার নুরুল ইসলাম জানান, যেভাবে নদীর পানি কমছে, তাতে নৌকা চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এখন ড্রেজিং করে নৌ পথ তৈরি করা না হলে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে জেলা সদরের সঙ্গে নৌপথের চৌহালীর যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্থরিব হয়ে পড়বে। দ্রুত ড্রেজিং করে নৌ চলাচল স্বাভাবিক করার দাবি জানান তিনি।

×