সিলেটের জাফলং এবং অন্যান্য পর্যটন স্পটে এমনি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে
পানি ও পাথরের নদী, উঁচু-নিচু ঠিলাভূমি, সবুজ চা গালিচায় নয়ন জুড়ানো ভালো লাগা। জাফলংসহ সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভিড়। তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। সিলেটসহ সারাদেশ থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা। সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড়, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরাম ধারায় প্রবহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ের গহিন অরণ্য ও সুনসান নীরবতায় অন্যরকম অনুভূতি।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নানা বয়সী পর্যটকরা এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছেন অপার আনন্দে। পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে জাফলংসহ পর্যটন স্পটগুলো। সকাল থেকে পর্যন্ত পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন জাফলং ছাড়াও মায়াবতী ঝরনা, বিছানাকান্দি, পানতুমাই, লোভাছড়া, রাতারগুলের মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর স্থানগুলোতে।
গোয়াইনঘাটের বিছানাকান্দির স্বচ্ছ জলে ছড়িয়ে আছে সফেদ রূপ আর পাথর-কণায় লুকিয়ে থাকা জলতলের সৌন্দর্য, জৈন্তাপুরের লালাখালের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর দুই ধারের অপরূপ সৌন্দর্য, দীর্ঘ নৌপথ ভ্রমণের সাধ যে কোনো পর্যটকের কাছে এক দুর্লভ আকর্ষণ।
এ ছাড়া বাংলাদেশের কোল ঘেঁষে প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহিন অরণ্যের কোলে বাংলাদেশ পানে নেমে আসা অপরূপ ঝরনাধারা পানতুমাই। অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা কানাইঘাট উপজেলার প্রাকৃতিক নৈসর্গের আরেক রূপ ‘লোভাছড়া’ এবং বাংলাদেশের একমাত্র জলারবন গোয়াইঘাটের রাতারগুলেও এবার ঢল নেমেছে পর্যটকের।
শুধু ঘোরাঘুরিই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব পর্যটকদের পদচারণায় এখন মুখর হয়ে উঠেছে হযরত শাহজালাল (র.) এবং শাহপরান (র.) এর মাজার আঙিনা।
গেল ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের সরকারি ছুটি। একদিন পর ২৭ ও ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় এই দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। অনেক চাকরিজীবীরা ২৬ ডিসেম্বর ছুটি নিয়ে টানা চারদিন ছুটি ভোগ করছেন। সে সঙ্গে আবারও ৩ ও ৪ জানুয়ারি বন্ধ।
কোনো ঠাঁই নেই সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে। সব কক্ষই টানা তিন-চার দিন করে বুকিং চলছে। হোটেল মালিকরা বলছেন বড়দিনের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটির কারণে পর্যটক বেড়েছে। সিলেটের ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ছুটির এই কয়েকদিনে সাদাপাথর, জাফলং ও বিছানাকান্দিতে অন্তত লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে। ইতোমধ্যে অনেকেই সিলেটে এসে অবস্থান করছেন এবং আগামীতে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়বে।
সিলেট ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ট্যুরিস্টদের সেবাদানে আমরা সবসময় প্রস্তুত রয়েছি। তাদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আমাদের ইউনিটগুলো কাজ করছে। সিলেটের সব স্পটে বাড়তি ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো কমতি নেই
মনোমুগ্ধকর ও প্রবল চিত্তাকর্ষক সিলেটের সাদাপাথর ও জাফলং পর্যটন স্পট। সাদাপাথরের শীতল পরশ ও জাফলংয়ের মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দলে দলে ছুটছেন পর্যটকরা। সারি সারি গাড়ি নিয়ে জড়ো হচ্ছেন সাদাপাথর স্পটে। সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদীর উজানে এই সাদাপাথর রাজ্যের অবস্থান। সাদাপাথর ও ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ যেন এক নৈসর্গিক আবহের হাতছানি।
সাদাপাথর রাজ্যের একদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সুরম্য পর্বতমালা, অন্যদিকে বাংলাদেশের পল্লীঘেরা সবুজশ্যামল পরিবেশ। এর মাঝখান দিয়ে মেঘালয় পর্বত থেকে প্রবাহিত ধলাই নদী। নদীর উজানে দুই পাড়ে প্রাকৃতিকভাবে বর্ণিল সাজে সাজিয়ে রাখা সারি সারি সাদাপাথর। উপরের নীল আকাশ, উজানের সবুজ পর্বতমালা ও নিচের সাদাপাথর মুগ্ধ করে ও মাতিয়ে রেখেছে ভ্রমণপিপাসুদের।