শীতলক্ষ্যা তীরের হাঁটাপথ এখন যন্ত্রচালিত যানবাহনের দখলে
নারায়ণগঞ্জে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে নির্মিত ওয়াকওয়ে (হাটাচলা রাস্তা) দিয়ে অটোরিক্সা, ব্যাটারি রিক্সা, মোটরসাইকেল ও বাইকেল চলাচল করছে। এতে ওয়াকওয়ে বিনোদন পিয়াসী লোকজন ও হাঁটতে বের হওয়া লোকজন নানা সমস্যায় পড়ছেন। প্রকাশ্যে ওয়াকওয়ে দিয়ে এ সকল যানবাহন চলাচল করছে।
বিশেষ করে সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ওয়াপদা কলোনি পর্যন্ত রাস্তায় অবাধে এ সব যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও অবহেলার কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াকওয়ের এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও শহরসহ আশপাশের এলাকার ওয়াকওয়ে দেখভাল না করায় অযতেœ-অবহেলায় ভেঙে যাচ্ছে।
জানা যায়, ২০০৯ সালের জুন মাসে হাইকোর্ট শীতলক্ষ্যা নদীসহ রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী চারটি নদী রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএকে নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশনার পরেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে শীতলক্ষ্যার তীরের অবস্থান। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যৌথ উদ্যোগে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়েক হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। কাঁচপুর সেতুর দুই পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে নদীর তীর রক্ষায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ, ওয়াকওয়ে (হাঁটার চলার জন্য) নির্মাণ ও গাছ লাগানো হয়।
আরও জানা যায়, ২০১৫ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর রক্ষার্থে ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। এ ওয়াকওয়েটি স্থানীয় জনগণের বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। এমনকি এ ওয়াকওয়ে প্রতিদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের বাদাম বিক্রেতা আকবর হোসেন বলেন, চিটাগাং রোড থেকে অটোরিক্সা, ব্যাটারি রিক্সা ও পায়ে চালিত রিক্সা যাত্রী নিয়ে কাঁচপুর ল্যান্ডিং স্টেশন দিয়ে ওয়াপদা কলোনি যাচ্ছে। এতে সারাক্ষণই এ স্থানের ওয়াকওয়েটি ব্যস্ত থাকছে। ফলে ঘুরতে আসা লোকজন ওই স্থানে অবস্থান করতে পারছে না।
আটি এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, আটি এলাকার ওয়াকওয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যরা মোটরসাইবেল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। প্রতিবাদ করতে গেলে অনেকেই হামলার শিকার হয়েছেন। তাই কিছুতেই ওয়াকওয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার হয়নি। কদমতলী থেকে ঘুরতে আসা ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকার ওয়াকওয়ে ঘুরতে এসেছি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর মোটরসাইকেল চলাচল করছে। অথচ ওয়াকওয়ে যানবাহন চলাচল করা নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও এগুলো অবাধে চলাচল করছে।
ওয়াপদা কলোনি এলাকার নাসির উদ্দিন বলেন, কাঁচপুর ল্যান্ডি স্টেশন থেকে ওয়াপদা কলোনি পর্যন্ত ওয়াকওয়ের অংশটুকু দিয়ে অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিতরিক্সা ও মোটরসাইকেল চলাচল করায় ওয়াকওয়ের ক্ষতি হচ্ছে। শীতলক্ষ্যা তীরের ভাসমান চটপটি বিক্রেতা আসলাম মিয়া বলেন, ওয়াকওয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করায় ঘুরতে আসা লোকজনের সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়াও ওয়াকওয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তাই এখানে বিনোদন পিয়াসীদের আগমন দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের উপ-পরিচালক মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, ওয়াকওয়ে শুধু হাটাচলার রাস্তা। এখানে অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল করলে লোকজনের চলাচলে সমস্যা হবে। এ বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করব। যাতে চলাচলরত লোকজনের কোনো সমস্যা না হয়। এ ছাড়াও ওয়াকওয়ের ভাঙ্গা অংশ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ মেরামত কাজ করে থাকেন।