ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

যমুনায় বালু উত্তোলন

বিদ্যুতের দুই টাওয়ার হুমকির মুখে

নিজস্ব সংবাদদাতা, শিবালয় মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

বিদ্যুতের দুই টাওয়ার হুমকির মুখে

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা এলাকায় যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন

যমুনায় স্থাপিত ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের দুটি টাওয়ারসহ নানা স্থাপনা হুমকির মুখে ফেলে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভুক্তভোগীরা বার বার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর তেওতা বালু মহালের নামে চলছে এমন কর্মযজ্ঞ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের দক্ষিণ তেওতা মৌজার আরএস-৪৪ দাগে যমুনা শিকস্তি মোট ৯.৫০৮১ একর জমি নিয়ে এ বালু মহালের চৌহদ্দি। বাংলা ১৪৩১ সালে এক কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় এ বালু মহালের ইজারা নেয় মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ নামক একটি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৩০ মে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ করেন। যার প্রোপ্রাইটার মো. আবুল বাশার। তিনি জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একাধিক মামলায় আসামি হয়ে তিনি রয়েছেন আত্মগোপনে। ইজারাদার আত্মগোপনে থাকলেও বালু উত্তোলন কাজের অন্তরালে সহায়তা করছেন স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন চিহ্নিত প্রভাবশালী নেতা।
ইজারাদারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী দক্ষিণ তেওতা মৌজার ৯ দশমিক কয়েক একর জমিতে বালুমহাল ঘোষণা থাকলেও নির্দিষ্ট এলাকার প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে আলোকদিয়া চরের কাছে বাতেনেরপাড়া এলাকা থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। এক সময় বাতেনের পাড়ায় অনেক মানুষের বাড়ি-ঘরসহ ছিল নানা স্থাপনা। বালু উত্তোলনের কারণে যার সবিই এখন বিলীন হয়েছে যমুনায়।
তবে, পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশনের দুটি বৈদ্যুতিক টাওয়ার। যা ধসে পড়লে সারা দেশে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বিপর্যয় ঘটবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। পাওয়ার গ্রিড মেইনটেন্যান্স ডিভিশনের শিবালয় কার্যালয়ের প্রকৌশলী মোহাম্মদ গিয়াস মাহামুদ বলেন, ‘ইস্ট ওয়েস্ট ইন্টার কানেকশন-১-এর অধীন যমুনা নদীর ওপর দিয়ে নেওয়া বিদ্যুতের তার সংযোগের টাওয়ারগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব¡পূর্ণ। এ সঞ্চালন লাইন সারা দেশের বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল। টাওয়ারের কাছাকাছি থেকে মাটি বা বালু তোলা নিষেধ রয়েছে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বালুমহালের বাইরে বালু উত্তোলন করছে জানিয়ে বলেন, তাদের দুই দফায় সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ড্রেজার, বাল্কহেড জব্দ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সে সক্ষমতা নেই। তবে স্থানীয় জনসাধারণকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

বাসাইলে ঝিনাই নদীর ভাঙন 
নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল থেকে জানান, বাসাইল উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বিলপাড়া বাজারের পাশে ঝিনাই নদীর পাড় ভেঙে গেছে। নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ায় গ্রামবাসীর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে গ্রামবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। নদীর পাড় ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষি জমি ও বসতবাড়ি ভাঙার উপক্রম হয়েছে। 
আদাবাড়ী চরপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুর রহমান বলেন, পাকিস্তানি আমলে নদীর মাঝ পর্যন্ত কৃষি জমি ছিল। সেটা ভাঙতে ভাঙতে মজনু মিয়ার বাড়ির সীমানায় রাস্তা চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়া আমরা সবসময় চলাচল করি। এই রাস্তা দিয়া বাসাইল উপজেলা সদর হয়ে টাঙ্গাইল শহরে যাই। এই রাস্তার মেরামত খুবই জরুরি। এ ছাড়া নদী ভাঙনে চকের জমিও চলে যাচ্ছে। কাজিরাপাড়া গ্রামের আবু বকর বলেন, আদাজান বিলপাড়া ঝিনাই নদীর ভাঙনে আমরা বিপর্যস্ত। সারা বছরই ঝিনাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ঝিনাই নদীর ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে।

যেটা নদীর পাড় ভাঙনে বড় সমস্যা। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন, হাবিবুর রহমান হবির নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা চলে আসছে। সহযোগিতা করছেন স্থানীয় আবুল হোসেন, করীম মেম্বার, বিশু, হাবিবুর রহমানের ছেলে জাহিদ, অহিদুল ইসলাম। এলাকার লোকজন বাধা দিলে বালু ব্যবসায়ীরা বলে তারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। 
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মামুন বলেন, নদীভাঙন ঠেকাতে আমরা কয়েকবার জিও ব্যাগ দিয়ে চেষ্টা করেছি। তারপরও ভাঙন ঠেকাতে পারিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। অতিদ্রুত ঝিনাই নদীর পাড় বেঁধে নদীর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

×