লংপুর গ্রামে গভীর সেচ নলকূপের ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরির প্রতিবাদে কৃষকদের বিক্ষোভ
উপজেলার লংপুর গ্রামে একটি গভীর সেচ নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমারের সকল যন্ত্রাংশ এবং মোটর গত দুই বছর আগে চুরি গেছে। এ জন্য লংপুর, চামারুল্লা, বাহের বানাইল ও ফুলবাড়িয়া গ্রামের প্রায় ১২শ’ কাঠা (১০ শতকে এক কাঠা) জমি চলতি বছর বোরো আবাদ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। আর এতে চারটি গ্রামের অন্তত দুই শতাধিক কৃষক কোনো উপায় না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নান্দাইল চৌরাস্তা-কেন্দুয়া পাকা সড়কের পশ্চিমপার্শ্বে বিস্তর পতিত জমি। জমির মাঝখানে একটি গভীর নলকূপ, কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নলকূপের কাছাকাছি খুঁটিতে তিনটি ট্রান্সফরমার ঝুলতে দেখা গেলেও ভেতর ফাঁকা। স্থানীয়রা জানান, এরশাদ সরকারের আমলে বসানো এ নলকূপের পানি দিয়েই তিন যুগ ধরে চারটি গ্রামের দুই শতাধিক কৃষক প্রায় ১২শ’ কাঠা জমিতে বোরো ধান চাষ করে আসছিলেন। জমি উর্বর হওয়ায় এখানে ধানের ফলনও ভালো হতো। কিন্তু গত দুই বছর আগে ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ার কারণে কৃষকরা বোরো ধানের চাষ করতে পারছেন না। এর ফলে চলতি বোরো মৌসুমেও এই এলাকায় বোরো ধান আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
লংপুর গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন খান (৫০) বলেন, আমার ৭০ শতক চাষের জমি রয়েছে। সবটুকু জমি এই নলকূপের আওতায়। এ জন্য গত দুই বছর ধরে আমি বোরো ধান আবাদ করতে পারিনি। এই বছরও পারব কিনা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কৃষক মাহাবুব আলম খান (৪৫) বলেন, আমার ১০০ শতক জমির মধ্যে বেশিরভাগ জমিই এই নলকূপের আওতায়। ট্রান্সফরমার চুরির পর বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কৃষক মোস্তফা (৭০), রাজিব মিয়া (৩৫), আব্দুল কাদির (৫০) ও আকরাম হোসেন (৫৫) বলেন, এই নলকূপের বিদ্যুতে ট্রান্সফরমার দুইবার চুরি হয়েছে।
এখন বোরো মৌসুম শুরু হচ্ছে। দুই শতাধিক কৃষক চলতি বোরো আবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। নলকূপটি বন্ধ থাকার কারণে কৃষক ছাড়াও স্থানীয় শ্রমিকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। নলকূপ সমিতির সাবেক ম্যানেজার কৃষক মতিউর রহমান খান (৬২) জানান, চোর একাধিকবার নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমার খুলে ভেতর থেকে সবকিছু নিয়ে গেছে। সমিতির গরিব কৃষক সদস্যদের পক্ষে বারংবার এত টাকা দিয়ে ট্রান্সফরমার ও মোটর লাগানো সম্ভব নয়।
নান্দাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, নিয়মানুযায়ী প্রথমবার ট্রান্সফরমার চুরি হলে অর্ধেক দাম দিয়ে তা কিনে নিতে হয়। এরপর থেকে যতবার চুরি হবে ততবারই সমিতিকে সাকুল্য টাকা পরিশোধ করতে হবে। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ফয়জুর রহমান বলেন, বিষয়টি জেনেছি। নলকূপ সমিতির ম্যানেজারকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এই বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।