পাহাড়ে শীতের রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম
পাহাড়ে শীতের আনন্দ সময় কাটাতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে ভোরের আলো ফোটার আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খাগড়াছড়ি যাচ্ছেন পর্যটকরা। তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে শহর ও জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র। প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলা ছাড়াও জেলা পরিষদ পার্কসহ বিভিন্ন স্পট এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখর। পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছেন ঢেউ খেলানো পাহাড় ও ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি দেখে। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য বাড়তি আনন্দ যোগ হয়েছে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
পর্যটন কেন্দ্রগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। পাহাড়ে শীত উপভোগে খাগড়াছড়ির বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্যণীয়। পর্যটক ও স্থানীয়রা ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলা পরিষদ পার্ক, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, রিছাং ঝর্ণা ও মায়াবিনী লেকসহ সবগুলো বিনোদন কেন্দ্র। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিবার নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই।
ঢাকা থেকে ঘুরতে যাওয়া নাজনীন, ফেরদৌসী ও নাজমুল জানান, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোর, সবখানেই এখন পর্যটকের ভিড়। আলুটিলা, রহস্যময় গুহা ও জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কসহ সব পর্যটকে পরিপূর্ণ। তাছাড়া, বছর শেষ। স্কুল-কলেজে চলছে শীতকালীন ছুটিÑ সবকিছু মিলিয়ে পর্যটক বাড়ছে খাগড়াছড়িতে। রাঙ্গামাটির সাজেক যেতে হলে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হয়। তাই যারা সাজেকে ঘুরতে যান, তারা খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোর সৌন্দর্যও উপভোগ করে যান।
যশোর থেকে খাগড়াছড়ি ঘুরতে আসা আমিন, তাবাসুম, সুমাইয়া ও জাহাঙ্গীর জানান, পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাদের আর্কষণ করে। বিশেষত নির্মল বাতাস, মুক্ত হাওয়াÑ যেটা শহরে পাওয়া যায় যায় না। সাজেক থেকেও খাগড়াছড়ির আলুটিলা ও হর্টিকালচার পার্ক তাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। শহরের মনোরম দৃশ্য আর আঁকাবাঁকা বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদী পর্যটকদের ভীষণ আকর্ষণ করে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবপস্থাপক উত্তম কুমার মজুমদার জানান, মাসের শেষ কয়েকদিন পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটেছে। যা গত ৬ মাস দেশের ও স্থানীয় রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকদের আগমন ঘটছে। পর্যটক বাড়ায় ব্যবসাও ভালো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট খাতে। তাছাড়া, এবার বাড়তি চাপ সামলাতেও সতর্ক রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশন।
পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, ছুটির ছাড়াও অনেক পর্যটক আসছেন। এতে রেভিনিউও বাড়ছে। তারা আশা করছেন জানুয়ারি মাসও পর্যটকদের ভিড় থাকবে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতে।
ঘুরতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের প্রস্তুতির কথা জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আয়ুব।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন। নিরাপত্তার পাশাপাশি পর্যটকদের যে কোনো সমস্যায় প্রশাসনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া তিনি জানান, আলুটিলা ও জেলা পরিষদ পার্কসহ সবকটি পর্যটক কেন্দ্রে প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ হাজারের মতো পর্যটকের সমাগম হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী থেকে জানান, ঘটনাবহুল ২০২৪ কে বিদায় জানাতে এবং ২০২৫ কে স্বাগত জানাতে কুয়াকাটায় ভিড় করেছেন হাজার হাজার পর্যটক, দর্শনার্থী। সৈকতের শূন্য পয়েন্টে ভিড় করেছেন তারা। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত। শীতকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার দুপুরে সাগরের নোনাজলে গোসলে মেতেছিলেন তারা। তবে, অন্য বছরের মতো এ বছর থার্টিফার্স্ট নাইটকে ঘিরে উপচেপড়া ভিড় ছিল না।
তারপরও আগতদের পদচারণায় মুখরিত সৈকতের বেলাভূমি। সন্ধ্যার পর সবাই ভিড় করেন ফিস ফ্রাই মার্কেটে। স্বাদ নেন সামুদ্রিক মাছের।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, উপচেপড়া ভিড় নেই। তবে, হোটেলের ৬০-৭০ শতাংশ কক্ষে অতিথি রয়েছে। কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সভাপতি ও ট্যুর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, বছরের শেষ দিনে পর্যটকের ভিড় রয়েছে। এ বছর বিধি নিষেধ থাকায় উত্তাপ কিছুটা কম।
থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে আতশবাজি কিংবা ফানুস ওড়ানোর বিষয়ে প্রশাসন থেকে বিধিনিষেধ প্রতিপালনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান, কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়ার ইউএনও রবিউল ইসলাম।