একসময়ের জাঁকজমকপূর্ণ রেল স্টেশন নীরবে পড়ে আছে
স্টেশন আছে। ঘর আছে। জনবল শূন্য। জনবল শূন্য থাকায় ঐহিত্যবাহী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে কোনো আলো জ্বলে না। শুধু স্মৃতির পাতায় পাতায় জড়িয়ে রয়েছে গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। নীরবে মূর্তির মতো কোলাহল মুক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে কালের সাক্ষী গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন। এই রেলস্টেশনে এখন আর ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত লাল জামা গায়ে সারিবদ্ধ শত শত কুলি-মজুর চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টিমারে নদী পার হয়ে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থী। স্টেশনের দুইপাশে নেই শত শত খাবার হোটেল। যে হোটেলগুলোতে সাজিয়ে রাখা হতো পদ্মা নদীর ডিম ছাড়া ও ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ ভাজা।
কলকাতা আর পূর্ববঙ্গের মধ্যে ‘বন্ধুত্ব’ রক্ষায় একমাত্র গোয়ালন্দ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গোয়ালন্দের ভূমিকা অপরিসীম। ১৮৬২ সালে শিয়ালদা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত চালু হয় রেল চলাচল। ১৮৭১ সালে কুষ্টিয়া থেকে রেলপথ সম্প্রসারিত হয় গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত। তৎকালীন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার জন্য গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশন ছিল প্রধান ভরসা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টিমারে পার হয়ে এসে ট্রেনে ভারতে যেত। স্টিমার পার হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটে আসা যাত্রীদের জন্য গড়ে ওঠা খাবার হোটেলে পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে ভাত খেত ভোজন রসিকরা।
গোয়ালন্দ ঘাট স্টিমারের খাবারের কথা সৈয়দ মুজতবা আলী, ধীরাজ ভট্টাচার্য লিখে গেছেন। গোয়ালন্দের অনেক স্মৃতি অনেক বইতে পাওয়া যায়। কলকাতা থেকে ট্রেনে গোয়ালন্দ ঘাটে এসে স্টিমারে ঢাকা যাওয়ার স্মৃতিগুলো এখনকার অনেকেই আমরা জানি না। প্রবীণদের মুখে মুখে সেই আমলের গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনের স্মৃতি শুনেছি।
ঐতিহ্যবাহী গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন দীর্ঘ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। তবে গোয়ালন্দ বাজার রেলস্টেশন পার হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রেল চলমান রয়েছে। তৎকালে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় বিভিন্ন ট্রেন চলাচল করত। কয়েক বছর পূর্বেও ৭টি ট্রেন চলাচল করত। কিন্তু এখন মাত্র দুইটি ট্রেন চলমান রয়েছে।
জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, গোয়ালন্দ বাজার ও গোয়ালন্দ ঘাট রেলস্টেশনে আবার শত শত কুলি-মজুর কাজ করবে। স্টেশনের দুইপাশে গড়ে উঠবে শত শত খাবার হোটেল। গড়ে উঠবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। হাজার হাজার যাত্রী সহজে এই রেলপথ দিয়ে প্রতিদিন আনন্দে চলাচল করবে। সার্বক্ষণিক মুখরিত থাকবে স্টেশন। জেলার হাজার হাজার মানুষ কর্মব্যস্ত থাকবে। ট্রেন চলমান থাকবে একাধিক।