ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

দিনাজপুরে জামায়াতের আমির

বুক পেতে যারা জীবন দিতে পেরেছে তাদের হাতে দেশ নিরাপদ থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

বুক পেতে যারা জীবন দিতে পেরেছে তাদের হাতে দেশ নিরাপদ থাকবে

সোমবার ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুল মাঠে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বুক পেতে যারা জীবন দিতে পেরেছে তাদের হাতে এদেশ নিরাপদ থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমরা তাদেরকে সম্মানিত করতে চাই। আমরা একটি সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে নৈতিকতার শিক্ষা থাকবে। শিক্ষা মানুষকে মানুষ করবে।

আমাদের শিশুরা একটি সার্টিফিকেট নিয়ে শুধু বের হবে না। দুই হাতে কাজ নিয়েও বের হবে। অফিস আদালতে ঘুষ বাণিজ্য চলবে না, কোনো চাঁদাবাজ আর হাত বাড়াবে না, দখলদারিত্ব থাকবে না- এমন একটি বাংলাদেশ আমরা চাই। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠের এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন। শফিকুর রহমান বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমরা নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু স্বৈরাচার সরকরের পতন ঘটাতে পারিনি। আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে তাদের নেতৃত্বেই আমরা স্বৈরাচার সরকরের পতন ঘটাতে পেরেছি। অগ্রভাগে তারাই ছিল।

এটা আমাদের গর্বের। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন, ১৮ নয় ১৭ বছর বয়স যাদের হয়েছে, তাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। কেউ কেউ বলছেন- এটা আমরা মানি না। কেন মানেন না। রাস্তায় নেমে এরাই তো স্বাধীনতা এনেছে। তারা বুক পেতে দিয়ে বলেছে গুলি কর। আপনি আমি তা পারিনি। প্রধান উপদেষ্টার এ কথাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা বলি তাদেরকে অবশ্যই ভোটার করতে হবে। যারা বুক পেতে দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, আমরা দেশবাসী তাদের ভোটের অধিকার কেন দিতে পারব না?
শফিকুর রহমান বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এমন কোনো উদাহরণ নেই, জাতি বিভক্ত হয়ে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছে এবং তারা উন্নতির শিখরে উঠেছে। বরং বিভক্ত জাতি বিশৃঙ্খল থাকে। আর যারা বিশৃঙ্খল থাকে, তাদের মাথায় অন্য সবাই কাঁঠাল ভেঙে খায়। বাংলাদেশের বিগত ৫৩টি বছর ধরে চলমান, এই বিভক্তির কবর রচনা করতে চাই। কোনো পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি এদেশের মানুষ আর মানবে না। ওই বিভক্তি আমাদের সর্বনাশ করেছে। এই সর্বনাশে জাতি আর হাবুডুবু খেতে চায় না।

এখন যারা এই বিভক্তিকে জিইয়ে রাখতে চেষ্টা করবে, তারা কার্যত জনগণের মুখোমুখি দাঁড়াবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর ক্ষমা করবে না। আমাদের এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। কোনো কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং জাতির স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে হাজার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র আমরা ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করব। 
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তি উপহার দিয়েছে তরুণরা। আগে মানুষ ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বলতে পারত না। স্বস্তির সঙ্গে নিজের জীবন নিয়ে চলাফেরা করতে পারত না। এখন মানুষ স্বস্তির সঙ্গে সব পারে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারত না। কথা বললেই মানুষের জীবনে বিভীষিকাময় শাস্তি নেমে আসত। এখন একটা সরকার ক্ষমতায় আছে। মিডিয়ার ভাইয়েরা নির্দ্বিধায় খবর পরিবেশন করতে পারেন।

শফিকুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে মিডিয়ার ভাইয়েরা ওলটপালট করে ফেলেন। আমার বক্তব্য বদলে ফেলেন। আমি বলেছিলাম যে যদি বাংলাদেশে কোরআনের সমাজ কায়েম হয়, তাহলে সেই সমাজে মেয়েদের মায়ের মর্যাদা দেওয়া হবে। তারা গর্বের সঙ্গে ইজ্জতের সঙ্গে এদেশে বসবাস করবে। কর্মক্ষেত্রে যার যার আগ্রহ আছে, অভিজ্ঞতা আছে, দক্ষতা আছে সে সেখানে যাবে। তারা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। জোর করে আমরা কাউকে পোশাক পরাব না। আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলব প্রত্যেকটি মা শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে গর্ববোধ করবে। অথচ একটা টেলিভিশন চ্যানেল বলে দিল, জামায়াতের আমির বলেছেন- মেয়েরা ইচ্ছামতো পোশাক পরিধান করবে। 
বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ক্বারি আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় দলটির সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মাহাবুর রহমান বেলাল, দিনাজপুর জেলা আমির আনিসুর রহমান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা রবিউল ইসলাম, জেলা অফিস সেক্রেটারি শহিদুল ইসলাম খোকন, উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান একেএম কাউসার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন দিনাজপুরের সহ-সভাপতি রাশেদুন্নবী বাবু, সহ-সেক্রেটারি এসএম হাদীউজ্জামান, উপজেলা সেক্রেটারি মন্জুরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি কেএম দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এর আগে রোববার রাতে দিনাজপুর সার্কিট হাউজে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

×