শহর এলাকার নদনদীগুলোই পলিথিন দূষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
প্রতিদিন পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার শেষে ফেলে দেওয়া হয়। এসব পলিথিন ব্যাগের একটা বড় অংশ নদীতে গিয়ে পড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের নদীগুলোর তলদেশে পলিথিনের পুরু স্তর জমেছে। শহর এলাকার নদনদীগুলোই পলিথিন দূষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
ফলে নদীর দূষণ তো বটেই, জীববৈচিত্র্যও ধ্বংস হচ্ছে। পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণে মাছের জীবনচক্র হুমকির মুখে পড়ছে।
পলিথিন মাটিতে পচে না, এতে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে ফলন কমে যাচ্ছে। বাজারে মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, শাকসবজি, ডিম, তরকারি, ফল, মিষ্টিসহ যে কোনো বিক্রীত পণ্য ভরে দেওয়া হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে কৃষিজমির।
পরিবেশ সংরক্ষণে ২২ বছর আগে ২০০২ সালে পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে সরকার। এ ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পলিথিনে তৈরি সব ধরনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত-বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এর ব্যত্যয় হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করেই প্রশাসনের নাকের ডগায় বাজারগুলোয় অবলীলায় বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ।
পরিবেশবিরোধী প্লাস্টিক, পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে আনতে মাঠ পর্যায়ে কঠোর মনিটরিং, সমন্বিত তৎপরতাসহ ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার। পাশাপাশি দ্রুত পচনশীল কাগজের ঠোঙা, কাগজ ও চটের ব্যাগের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা করা না গেলে পলিথিনের নেটওয়ার্ক ঠেকানো যাবে না। কারণ পলিথিন হচ্ছে সহজপ্রাপ্য ও সাশ্রয়ী উপকরণ।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় (২০০১-২০০৬) তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী বাজারগুলো পলিথিনমুক্ত করেছিলেন। ২২ বছর আগে শুরু করা উদ্যোগ অনেক দিন টিকে ছিল সাফল্যের সঙ্গে। তবে পলিথিন মুক্তির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে তাঁর সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
বিগত সরকারের শিথিল নীতির কারণে ধীরে ধীরে পলিথিনে সয়লাব হয়ে ওঠে বাজার।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর প্লাস্টিক পলিথিন ব্যবহার বন্ধে ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন। একইভাবে ১ নভেম্বর থেকে বন্ধ ঘোষণা করেছেন, বাজারে পলিথিনের ব্যবহার।
সমাজসেবী মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বাজার থেকে তুলে দিতে হলে বিকল্প উৎসগুলো সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করতে হবে। অপরদিকে পলিথিন উৎপাদন কারখানাগুলো বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ঋণের মাধ্যমে স্বল্পপুঁজির ছোট ছোট ব্যাগ উদ্যোক্তা গড়ে তোলায় উদ্যোগ নিতে হবে।
আর কে