ছবি: জনকণ্ঠ
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে ছিল ঢেঁকি। আধুনিক প্রযুক্তি আর কালের বিবর্তনে কাশিয়ানী থেকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া দেশের শহর- গ্রাম, সব খানেই বদলে গেছে জীবন-যাত্রার মান। এখন অগ্রহায়ণ মাসে ধান ঠিকই কৃষক গোলায় তুলেকিন্তু আর শোনা যায় না টেকির 'ঢুকুর ঢুক, টুকুর টুক' সেই ছন্দময় শব্দ। পৌষ মাসে নতুন ধান-সেই নতুন ধান থেকে চাল। তারপর চালের আটা দিয়ে তৈরি পিঠা পুলি, ফিরনি-পায়েশ এখন ইতিহাস।
এ ছাড়া নবান্ন উৎসব, ঈদ-পুঁজো কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হতো।
বিভিন্ন ধরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরিতে মানুষের জীবন-যাত্রার মান সহজ করা হয়েছে। টেকি এখন শুধু স্থায়ী ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। ঢেঁকিশিল্প আজ বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে। টেকির স্থান হয়েছে এখন যাদুঘরে।
এখন ঢেঁকির শব্দে আর ঘুম ভাঙ্গে না। ঘুম ভাঙ্গে কাকের কা-কা ডাকে। উপজেলার মাজড়া গ্রামের একজন কৃষক মোঃ টুকু মিয়া (৭৫) শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প। 'আমাদের বাড়িতে প্রায় সারাদিনই ঢেকি চলতো।
আমরা নিজেরা যেমন ঢেঁকিতে ধান ভানতাম তেমনি যারা নিতান্ত গরীব, যাদের বাড়িতে ঢেঁকিছিলো না, তারাও আমাদের বাড়িতে ধান এনে ঢেঁকিতে ধান ভানতো। আহা, ঢেঁকি-ছাঁটা চালের সে কী-স্বাদ।
এখন মিলের চালের ভাত খাচ্ছি না ঘাস খাচ্ছি কিছুই বোঝা যায় না। ধান কলের আগমনে টেকিএখন বিলুপ্তির পথে'।
উপজেলার বরাশুর গ্রামের শিপুর বেগম (৫৬) জানান, আগে সবার বাড়িতে টেকিছিল। এখন কোন কোন বাড়িতে দু' একটা ঢেঁকি আছে কিনা- সন্দেহ। সেই ছোট বেলায় ঢেঁকিছাটা চালের পিঠার স্বাদ ও গন্ধ মনে হয় এখনো জিহবায় লেগে আছে'।
কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, 'ঢেঁকিছাড়া চালের পুষ্টিমান অনেক বেশি। এ চালের ভাত খেলে যেমন শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটে তেমনি কর্মক্ষমতা বাড়ে।
আজ কলেছাঁটা চালের ভাত খেয়ে আমরা নানা প্রকার অসুখে ভুগছি। প্রতিটি বাড়িতে আবার যদি ঢেঁকি স্থাপন করা যায়, তাহলে শরীরের মেদ ঝরানোর জন্য আর ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতে হবে না।'
নাহিদা