মাদারীপুর শহরের গোলাবাড়ির আকিব মাতুব্বরের চোখে তিনটি অপারেশন হলেও তিনি দেখতে পান না
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনে জোরালো ভূমিকা ছিল মাদারীপুরের ছাত্র-জনতার। প্রথম থেকেই কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে বিভিন্ন স্পটে আন্দোলনে অংশ নেয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত ও আহত হয় বহু ছাত্র-জনতা। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার অভাবে শরীর থেকে গুলি বের করতে না পারায় আহতদের অনেকেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এদিকে নতুন বাংলাদেশ গড়তে আর কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে দেখতে চান না অন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা।
আহত শিক্ষার্থী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয় মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার ধুলগ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র ও শহরের জজকোর্ট গোলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আকিব মাতুব্বর। তিনটি অপারেশন করানো হলেও এখনো ঠিকমতো চোখে দেখতে পায় না সে। এতে আকিবের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।
এদিকে পাশের মাদারীপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাফাইয়েত ইসলাম অনাবিলের শরীরে এখনো রয়ে গেছে দেড় শতাধিক রাবার গুলি। অর্থাভাবে অনাবিলের পরিবার করাতে পারেনি সুচিকিৎসা, হয়নি অপারেশনও। প্রচ- ব্যথা আর যন্ত্রণায় দিন পার করছে বাণিজ্য বিভাগের মেধাবী এই শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুরের মোস্তফাপুর, খাগদি, যুব ভবন, নতুন বাস টার্মিনাল জজকোর্ট, ইটেরপুল, ডিসি ব্রিজ, শিল্পকলা একাডেমি মোড়, শকুনি লেকেরপাড়সহ অন্তত ১২ স্পটে ভাগ হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজার শিক্ষার্থী। আন্দোলনের নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে শকুনি লেকে ডুবে মারা যায় দীপ্ত দে।
গুলিতে মারা যায় তাওহীদ সন্নামাত ও রোমান বেপারি নামে দুইজন। এছাড়া আহত হয় অনেক শিক্ষার্থী। আহতদের সহযোগিতা ও নিহতদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদের স্বীকৃতির দাবি নিহতদের পরিবারের। দেশের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে দেখতে চান না অন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, সমন্বয়ক ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। এরপর পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনজন নিহতের ঘটনায় আলাদা তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মাদারীপুরের সাবেক ৪ সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
আহত শিক্ষার্থী আকিব মাতুব্বর বলেন, ‘আমরা মিলে সবাই প্রথমে ইউআই স্কুল মাঠে জড়ো হই, পরে ডিসিব্রিজ এলাকায় আসি। ছাত্রলীগ ও পুলিশ সদস্যরা আমাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে জজকোর্ট এলাকায় আন্দোলন করলে পুলিশের গুলিতে আমার চোখ নষ্ট হয়। চোখে গুলি ঢুকে যাওয়ায় রাজধানীর দুটি হাসপাতালে তিনটি অপারেশন করাতে হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন বছরে অন্তত ২ বার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনোদিন আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব না।
এখন সরকারি সহযোগিতা ছাড়া স্থায়ী চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।’ আহত শিক্ষার্থী সাফাইয়েত ইসলাম অনাবিল বলেন, ‘আমার শরীরে এখনো প্রায় দুইশ’ রাবার গুলি রয়েছে। অপারেশন করাতে প্রচুর টাকা দরকার। অর্থাভাবে সেটা করানো সম্ভব নয়। দিনে ও রাতে শরীরের প্রচ- ব্যথা করে। আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাই উন্নত চিকিৎসাও করানো সম্ভব হয়নি।