ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

সৌন্দর্যবর্ধন হলেও সুফল মিলছে না

বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সৌন্দর্যবর্ধন হলেও সুফল মিলছে না

যত্রতত্র ময়লা আর্বজনার ভাগাড় শহরের প্রাণকেন্দ্র কাটাখাল

সিরাজগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র কাটাখাল ও আশপাশের এলাকা সৌন্দর্যবর্ধনের পরও খালটি  ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ই রয়ে গেছে। খালপাড়ে দৃষ্টিনন্দন আর্চ ব্রিজ, ফুটওয়াকওয়ে, ইলেক্ট্রিফিকেশনের সুফল পুরোপুরি জনগণ পাচ্ছে না। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। প্রতিরোধ হচ্ছে না। তবে জনকল্যাণে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের পর প্রকল্পের সুবিধা পেতে সুফলভোগীদেরও দায়িত্ব নিতে হবে এমনটাই বললেন প্রকল্প গ্রহণকারী সিরাজগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষ।
সিরাজগঞ্জ শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত কাটাখাল সংস্কার কাজে দাতাসংস্থার মাধ্যমে কয়েকবছরে পানি উন্নয়ন বিভাগ ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা খরচ করেছে। তবে পরিস্থিতির  আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। বর্ষা মৌসুমে যমুনার পানি এই কাটাখালে প্রবেশ করলেও সারাবছর পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। বছরের বেশিরভাগ সময় অনেকটা মরা খালে পরিণত হয়ে পড়ে থাকে। পৌরসভার নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে উভয়পাড়ের বসতিরা অনবরত ময়লা আবর্জনা ফেলছেন কাটাখালে। এতে খালটি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, এমনটি বলেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, উচ্চহারে সুদের প্রতিশ্রুতিতে দাতা সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ৫০ কোটি টাকা খরচের পরও শহরের ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাখাল’ এখনো আবর্জনার ভাগাড়। দুই পাশে বসবাস করা শহরের বাসিন্দারা প্রতিদিন গৃহস্থালির বর্জ্য খালে ফেলছেন। এতে মশা-মাছির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে এটি। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আনাগোনাও দেখা যায়।
ষাটের দশকে তৎকালীন মহকুমাবাসীর চলাচল ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘কাটাখাল’ খনন হয়। পরে দুই পাশে ক্রমেই দখল হয়ে সরু হতে থাকে। অতীতে শহরের গোশালা থেকে কাটাখালের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতা বন্দরে নদীপথে পাট রপ্তানি হলেও এটি এখন রূপকথা গল্পের মতো। দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ কাটাখাল সংস্কারের কোনো উদ্যোগও নেননি।
তবে সদ্য, সাবেক মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তার সময় উচ্চহারে সুদের প্রতিশ্রুতিতে জার্মান দাতা সংস্থা ‘কেএফডব্লিউ’র ঋণের ৫০ কোটি টাকা খরচ করা হয় কাটাখাল খনন ও সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের নামে। কিন্তু দুই পাশে নালা না থাকা এবং ময়লা-আবর্জনা বা বাজারের মাছ-মাংসের বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে কিছুদিন না যেতেই ভেস্তে যায় প্রকল্পটি। ফের এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়। সম্প্রতি পৌরসভা থেকে দুই পাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি নেওয়া হয়। তবে তা ছিল অনেকটা দায়সারা। ময়লা-আবর্জনা ও ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করে তা খালেই ফেলতে দেখা যায় দৈনিক মজুরভিত্তিক পৌরসভার শ্রমিকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন কাটাখালে। রেলগেট ও বড়বাজারের মাছ-মাংস, জবাই পশু ও মাছ-মুরগির বর্জ্যও ফেলা হয়েছে। মিরপুর ও বিড়ালাকুঠি থেকে সুতা রং কারখানার বর্জ্যরে কারণে পানি দূষিত হয়ে গেছে। সাড়ে ২১ কিলোমিটার খালের প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার অংশ গত তিন বছরে খনন করা হয়েছে। কিন্তু আবর্জনা ফেলায় তা কাজে আসছে না।
শহরের শেরেবাংলা ফজলুল হক সড়কের সুইপার কলোনির পাশে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জার্মান দাতা সংস্থার মাধ্যমে পৌরসভার আরেকটি প্রকল্পের আওতায় কসাইখানা ও মাছ-মুরগির শেড তৈরি হয়েছে। তবে এখনো চালু হয়নি। নির্মাণের পর তিন বছর ধরে পড়ে রয়েছে। বিক্রেতারা পুরোনো বাজার ছেড়ে সেখানে যেতে চান না।
বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুন্নবী কাটাখালের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কারণ এ প্রকল্প তার সময়ে বাস্তবায়িত হয়নি। তবে পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বলেন, ‘কাটাখাল ও আশপাশের এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনসহ তিনটি আর্চ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। সুইপার কলোনির পাশে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক কসাইখানা ও মাংস-মুরগির শেড করা হলেও ব্যবসায়ীরা সেখানে যান না। আর শুধু সংস্কার যথেষ্ট নয়, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলাও বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক এই  নির্বাহী প্রকৌশলী। পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, জনকল্যাণে প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়নের পর প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার সচেতনতামূলক সভা-সমাবেশ করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিষেধ করে নানা স্থানে বিলবোর্ড সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার ট্রাফিক পুলিশসহ পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় তিন দফায় ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে পরিষ্কার করা হচ্ছে। ‘কাটাখালের ঝোপঝাড় পরিষ্কারে দৈনিক হাজিরার শ্রমিকরা কাজ করছেন।’ তারপরও যদি কাটাখাল আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়। সেক্ষেত্রে সফলভোগীদের সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানানো ছাড়া কি বা করার থাকে। শহরের সৌন্দর্য রক্ষা শুধু পৌর কর্তৃপক্ষেরই নয়- শহরবাসীকেও দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই সৌন্দর্যের সুফল পাওয়া যাবে।

×