
এখন ঘরে চলছে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ। ভরা মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহ জেলার গাছিরা। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস। আর রস থেকে তৈরী হয় গুড়, পাটালি, পায়েসসহ নানা ধরনের পিঠা পুলি। গাছ কেটে একফোটা রস বের করতে যে ঘাম ঝরে একজন গাছির তার মূল্য সহজে ঘরে আসে না। কিন্তু গাছি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে গুড় তৈরী করে তার ঘ্রাণে গাছিরা ভুলে যায় সেই ঘাম ঝরানো কষ্টের কথা। নতুন প্রজন্মের গাছিরা কষ্টের কারণে খেজুর গাছ কাঁটতে চইনা বলেই হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরের রস আর গুড়। তবে এলাকায় ব্যপক চাহিদা থাকায় বয়স্ক গাছিরা এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। প্রতি বছর শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের পায়েস আর বিভিন্ন ধরনের পিঠ-পুলির। বর্তমানে বাজারে খেজুরের গুড় বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০টাকায়। গুড়ের বর্তমান দামেও খুশি গাছিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঝিনাইদহে রাস্তার দু’পাশে সারিবদ্ধ খেজুরগাছ। জমির আইলে ও পতিত জায়গায়ও রয়েছে অসংখ্য খেজুর গাছ। বিশেষ করে জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা মেলে এ দৃশ্য। গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কেটে পরিষ্কার করেন। এর কিছুদিন বিরতির পর গাছের পরিস্কার করা অংশ শুকিয়ে নিয়ে আবার কয়েক দফায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছেঁটে ফেলা হয় গাছের ছাল। গাছ কাটার এ কাজে গাছিরা ধারাল অস্ত্র ব্যবহার করেন। গাছ কাটার সময় খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের কোমরে থাকে বাশেঁর তৈরী ঠোঁঙ্গা (স্থানীয় ভাষায়) যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার দাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়।
এরপর গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে পাত্রের (ভাড়) ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশের তৈরী একটি নলি ও দুপাশে দু’টি চোখা বা খুঁটি পোতা হয় যার সাথে রস সংগ্রহের পাত্র (ভাড়) ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুরের রস।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামে, খেজুরের রস আহরণ শুরু করেছেন ৬৫ বছর বয়সের গাছি শহিদুল ইসলাম। তিনি নিয়মিতভাবে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, সপ্তাহের নির্ধারিত দিন বিকেলে গাছের মাথা হালকা ভাবে ছেঁটে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র (ভাড়) ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে দু’থেকে চার কেজি হারে রস পাওয়া যায়, যা থেকে এক থেকে দেড় কেজি গুড় হয়। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন পরপর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। রস জ্বালিয়ে গুড় বানাতেও গাছিদের ভোগান্তি কম নয়। কারণ খেজুর গাছের ডাল ও অন্যান্য খড়ি সংগ্রহ করে এ রস থেকে গুড় বানাতে হয়। অসৎ ব্যবসায়ীরা অনেক সময় রসের মধ্যে চিনি মিশিয়ে গুড় তৈরী করে। ভাল গাছিরা এগুলো করেনা, দাম কম হলেও গাছিরা সন্তষ্টচিত্তে প্রতিদিন তাদের গাছ পরিচর্যা ও রস সংগ্রহ করে থাকেন।
মোহাম্মদ আলী