ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

জীবন সংগ্রামে হার না মানা নারী রুণা বেগম, পিঠা বিক্রি করে চালান সংসার

নিজস্ব সংবাদদাতা, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

জীবন সংগ্রামে হার না মানা নারী রুণা বেগম, পিঠা বিক্রি করে চালান সংসার

জীবন মানেই যুদ্ধ। মানুষের চলার পথ পুষ্প সজ্জিত নয়। প্রতিটি মানুষকে জীবনের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। এমনি এক জীবন সংগ্রামী নারী মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার রুণা বেগম।

৪০ বছর বয়সী রুণা বেগমের বাড়ী উপজেলার উত্তর কাওন্নরা গ্রামে। সাটুরিয়া সদর বাজারের টার্মিনানের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে। এই পিঠা বিক্রির টাকায় চলে তার সংসার, মেয়ের পড়াশোনা এবং তার চিকিৎসা খরচ। তবুও থেমে নেই উদ্যোমী এই নারী।
রুণা বেগম সাটুরিয়া সদর ইউনিয়নের উত্তর কাওন্নরা গ্রামের মৃত হারুন উর রশীদের স্ত্রী।

পিঠা বিক্রেতা রুণা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবার অভাবের সংসারে বেড়ে উঠেছেন তিনি। জীবনের কোন শখ-আল্লাদ পূরণ করতে পারেনি বাবার অভাব অনটনের সংসারে। টাকার অভাবে পড়াশোনাও করতে পারেননি তিনি। সংসারে অভাব থাকায়, টানাপোড়েনের সংসারে শৈশবেই বিয়ে দেন তার পরিবার। বিয়েও হয় আরেক অভাবের সংসারে। বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি সবখানেই যেন কষ্ট,কষ্ট যেন আর শেষই হয়না তার জীবনে। দুই মেয়ে নিয়েই তার জীবন সংসার। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে আর ছোট মেয়ে মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তিনি বলেন ৩০ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছিল হারুন উর রশীদের সাথে। গত ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা যায়। তখন তার ছোট মেয়ে ফাতেমা আক্তারের বয়স ছিল ৪ বছর। তখন থেকে জীবনের প্রয়োজনে, বেঁচে থাকার তাগিদে বেড়িয়ে পড়েন কর্মের সন্ধানে। সেই থেকে বিরামহীনভাবে ভাবে চলছে তার জীবন সংগ্রাম। বিপদ যেন তার পিছু ছাড়ে না, গত বছর স্ট্রোকজনিত কারণে তার বাম হাত ও বাম পা অবশ হয়ে যায়। এক হাতই চলছে তার টিকে থাকার সংগ্রাম। তবুও হার মানেনি তিনি, হাত পাতেনি সমাজের কারো কাছে। নিজেই পিঠা বিক্রি করে, সেই টাকা দিয়ে চালাচ্ছেন সংসার খরচ , মেয়ের পড়াশুনা ও নিজের ঔষধ খরচের টাকা। তার এ কাজে তার বড় মেয়ের ছেলে ও তার ছোট মেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে সহযোগিতা করে থাকেন।

পিঠা বেগম বলেন, সারা বছরই তিনি ভোরবেলা থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চালের গোড়া দিয়ে চিতই পিটা ও ভাপা পিঠা তৈরি করে তা বিক্রি করে থাকেন। প্রতিটি চিতই পিঠা ও ভাপা পিঠা বিক্রি হয় ১০ টাকা মূল্যে। চিতই পিঠার সাথে দেওয়া হয় ধনিয়া , মরিচ, শুটকিসহ বিভিন্ন ধরনের বাটা মশলার ভর্তা। প্রতিদিনই তিনি ৮ থেকে ১০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন। এতে তার দৈনিক সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ৩০০থেকে ৪০০ টাকা থাকে। মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মতো আয় রোজগার হয় তার। রোজগারের বেশিরভাগই চলে যায় তার ওষুধ কিনতে। প্রতি সপ্তাহে তার ১ হাজার টাকার ওষুধ লাগে বলে জানান তিনি। এ ছাড়াও সংসার খরচ ও মেয়ের পড়াশোনা টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এই দুর্মূল্যের বাজারে যা রোজগার করি তা দিয়ে ঠিকমত তিনবেলা খাওয়াই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বছর তেমন একটা পিঠার চাহিদা থাকে না। তবে শীতের সময় আসলে পিঠার চাহিদা বাড়ে বলে জানান তিনি। তৎকালীন সরকারের সময়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘর পেয়েছেন তিনি। তার নিজের বলতে সম্বল এই ঘরটি। এ ছাড়া আর কোন জমি জমা তার নেই। একা চলাফেরার অসুবিধার জন্য তিনি যে ঝুপড়ি ঘরে পিঠা বিক্রি করেন এবং রাতে সেই ঘরেই থাকেন বলে জানান।

নাহিদা

×