গোলবুনিয়া ও জানখালী গ্রামের সীমান্তবর্তী সাংরাইল খালের ওপর বিধ্বস্ত সেতু
মঠবাড়িয়ায় উপজেলার গোলবুনিয়া ও জানখালী গ্রামের সীমান্তবর্তী সাংরাইল খালের ওপর নির্মিত সংযোগ সেতুটির বেহাল। লোহার সেতুর পাটাতনের স্ল্যাবগুলো এক যুগ আগে ভেঙে গেছে। লোহার বিমের ওপর সুপারিগাছ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানিয়েছেন স্থানীয়রা। ওই সাঁকোর ওপর দিয়েই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে খাল পার হচ্ছেন ৬ গ্রামের হাজারো মানুষ।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০ বছর আগে সাংরাইল খালের ওপর লোহার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় সিডরে গাছ পড়ে সেতুটির পাটাতন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে পাটাতনের রড ও সিমেন্টের তৈরি স্ল্যাবগুলো ভেঙে যেতে থাকে। ১৩ বছর আগে সেতুটির স্ল্যাবগুলো ভেঙে যাওয়ায় পারাপারের জন্য বিমের ওপর দেওয়া হয় সুপারিগাছ। মেরামত না হওয়ায় এভাবেই লোকজন চলাচল করে আসছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর মীর বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতু নির্মাণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। তবে কোনো ফল মেলেনি। নিরুপায় হয়ে সেতুর ওপর এক পাশে সুপারিগাছ ও বাঁশ দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করেছি। শিশুশিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় যেতে সেতুটি পার হতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনায় পড়ে। তা ছাড়া কৃষিনির্ভর এ এলাকার মানুষ কৃষিপণ্য ঘাড়ে-মাথায় করে ঝুঁকি নিয়ে সেতু পারাপার হয়ে বেতমোর বাজারে যাতায়াত করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের প্রকৌশলী জিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩০ বছর আগে সেতুটি উপজেলা পরিষদ নির্মাণ করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়ে মঠবাড়িয়ার একটি জরাজীর্ণ সেতু তালিকা চেয়েছেন, সেগুলো আমরা পাঠিয়েছি। উপজেলা ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়কের সেতু নির্মাণ প্রকল্প ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তালিকা পাঠানো হয়েছে। যদি অনুমোদন হয়ে তালিকা আসে তাহলে আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হবে।
মোরেলগঞ্জে ৮ গ্রামের মানুষের ভরসা বাঁশের সাঁকো
নিজস্ব সংবাদদাতা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট থেকে জানান, মোরেলগঞ্জে দুইটি ইউনিয়নের ৮ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। খালে ভেঙে পড়া কাঠের পুলের স্থানে দুই বছরেও নির্মাণ হয়নি পুল বা ব্রিজ। স্কুল শিক্ষার্থী, বয়োবৃদ্ধ, নারী, শিশুসহ অসুস্থ রোগীদের ভোগান্তি এখন চরমে। স্থানীয়দের দাবি জনগুরুত্বপূর্ণ চলাচলের স্থানটিতে একটি ব্রিজ নির্মাণের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ দুইটি ইউনিয়নের উত্তর সুতালড়ি, সূর্যমুখী, পূর্ব কাটাখাল, বেতবুনিয়া, ফুলহাতা, বহরবুনিয়া, নারিকেলবাড়িয়া ও ঘষিয়াখালীর ৮ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি এখন চরমে দাঁড়িয়েছে। এ সাঁকোটি পেরিয়ে প্রতিদিন ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মা বাবা ঋণ ডিগ্রি কলেজ, ডা. হিরন্ময় কারিগরি কলেজ, ৪টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাচ্ছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়াও ১৫/২০টি মসজিদের মুসল্লিরা নামাজ আদায়ে যেতে হচ্ছে মসজিদে।
প্রতিনিয়ত সেবা নিতে জনসাধারণ যাচ্ছেন ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ, ফুলহাতা বাজার, বহরবুনিয়া বাজার, ঘষিয়াখালী বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে। এ সাঁকো পার হতে গিয়ে ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ২ বৃদ্ধসহ এক শিশু শিক্ষার্থী।
স্থানীয় গ্রামবাসী অবসরপ্রাপ্ত নেছার উদ্দিন, ফারুক হাওলাদার, রহিমা আক্তার চম্পা, মাদ্রাসা শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম হাওলাদারসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, পুলটি ভেঙে যাওয়ার পূর্বে নড়বড়ে থাকা অবস্থায়ই ২/৩ বছর ধরে শুনে এসেছি এখানে নাকি একটি ব্রিজ হবে। কর্মকর্তারা অনেকবার এসে পরিমাপ করে গেছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা নেই।
বারইখালী ইউপি চেয়ারম্যান আউয়াল খান মহারাজ বলেন, উত্তর সুতালড়ী খালের ওপরে পুলটিতে ইউনিয়ন পরিষদের একবারের বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে সংস্কার করা হয়েছে। পরবর্তীতে আর কোনো মেরামত হয়নি। সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ার পর সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ। ওই স্থানে ব্রিজের জন্য এলজিইডি দপ্তরে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া রয়েছে। এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ভেঙে যাওয়া কাঠের পুলটির স্থানে এ বছরে এডিপির বরাদ্দ থেকে পুনরায় নতুন পুল নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সুরমা নদীতে কাঠের সেতু
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস থেকে জানান, বর্ষার সময় খেয়ানৌকা দিয়ে পারাপার হলেও শুকনো মৌসুম নদীতে নৌকা চলাচলের উপযোগী পানি না থাকায় দীর্ঘদিন যাবত বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর এই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে ১০ গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেন ইজারাদার।
ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াতের কথা বিবেচনা করে মানুষের সুবিধার্থে এবার খেয়াঘাটের ইজারাদার বাঁশের পরিবর্তে কাঠ দিয়ে নির্মাণ করেছেন প্রায় ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু। এতে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। নৌকা দিয়ে যেভাবে টাকার বিনিময়ে নদী পার হতো ঠিক একই ভাবে এ কাঠের সেতু দিয়ে নদী পারাপারেও ফি দিতে হচ্ছে।
কানাইঘাট উপজেলা প্রায় ১০টি গ্রামের বাসিন্দাদের জেলা শহরে যাতায়াত ও নিত্যদিনের কাজের জন্য সুরমা নদী পার হতে এই সেতু ব্যবহার করতে হয়। বর্ষার সময় ইজারাদাররা নৌকা দিয়ে নদী পারাপার করতে জনপ্রতি পাঁচ টাকা করে নেন। শুষ্ক মৌসুমে নদীর ওপর তারা বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেন। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপারেও জনপ্রতি ৫ টাকা করে ইজারাদারকে দিতে হয়।