জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দলের কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সাম্যের, বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন। সব ক্ষেত্র থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে, যেখানে সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘুর ধর্মীয় ভেদাভেদ থাকবে না। সব মানুষই দেশের নাগরিক হিসেবে পরিচিত হবে। তিনি মঙ্গলবার সকালে গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জেলা শাখার এক বিশাল কর্মী সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, অফিস-আদালত থেকে ঘুষ-দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে।
চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। জামায়াত আমির বলেন, গত ১৫ বছরে অসংখ্য মায়ের বুক খালি হয়েছে। আয়না ঘরে বন্দি রেখে জঙ্গিবাদের নাটক করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের নামে বিনা ভোটে এমপিদের পাস করানো হয়েছে, নিশিরাতে ভোট হয়েছে এবং ২০২৪ সালে আমি আর ডামির নির্বাচন হয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের দেশ প্রেমিক বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করে সীমান্ত চৌকিদার বিজিবি করেছে।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন করা হবে না। মসজিদ যদি পাহারা দেওয়া না লাগে তবে মন্দিরও পাহারা দেওয়া লাগবে না, সবাই শান্তিতে সহাবস্থান করবে। তিনি এ সময় স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন অত্যাচার, বাড়িঘর লুটপাটের আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কেউ নারীদের ইজ্জতকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না, তাদের পূর্ণ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। তিনি গাইবান্ধায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবি জানান, বর্তমান সরকারের কাছে।
জেলা জামায়াতের আমির মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ডা. আব্দুর রহীম সরকার, সিনিয়র নায়েবে আমির বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়ারেছ সরকার, জেলা সেক্রেটারি জহুরুল হক সরকার, সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রোকনুজ্জামান প্রমুখ।
এদিকে, নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, আওয়ামী লীগ দেশের মালিক বনে গিয়েছিল। আর দেশের মানুষকে অর্থাৎ আমাদের সবাইকে ভাড়াটিয়া মনে করেছিল, যার কারণে হেফাজতে ইসলামের ওপর নারকীয় হত্যাকা- ও ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যার পর জামায়াতের ওপর হাত দিয়েছিল। তাদের খুন, গুম, ধর্ষণসীমা ছাড়িয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার বিকেলে রংপুরের মিঠাপুকুর কলেজ মাঠে আয়োজিত সভায় এই মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশপ্রেমিক নাগরিকদের সহ্য করতে পারে না বলেই আয়নাঘর বানিয়ে গুম, খুন শুরু করেছিল। তারা কোনো মানুষকে সম্মান দিতে শিখেনি। খালেদা জিয়ার মতো একজন প্রবীণ মানুষকেও তারা জেলে রেখেছিল। শহীদ আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার রক্তের প্রত্যেক ফোটা কথা বলছে। তখন যুবকরা রাস্তায় নেমেছে বলেছে বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর। তার পথ ধরে রাস্তায় নেমেছিল লাখ লাখ যুবক-যুবতী।
১০ মাসের শিশু নিয়ে মাও এসেছিল রাস্তায়। জামায়াতের আমির বলেন, বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগ ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছে। বিচারের আসনে বসে তারা রাজনীতি চর্চা করেছে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাঈদী সাহেবকে উদ্দেশ্য করেও এই কালা মানিক হুংকার দিয়েছিল। শেষমেশ নিজে ভারত পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন। আমাদের কোনো দিদি বাড়ি নাই, মামা বাড়ি নাই। পালানোর প্রয়োজন নাই। তিনি আরও বলেন, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ২৬ লাথ কোটি টাকা পাচার করেছে। যা বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের ৫ গুণ।
আমরা এমন এক দেশ চাই। যে দেশে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। দুর্নীতি টেন্ডারবাজি থাকবে না। এই সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেককে সম্মান করবে। যে দেশে আমার মায়েরা ইজ্জতের সঙ্গে নিরাপত্তার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে কাজ করবে। আমরা জোর করে নারীকে বোরকা পরাব না। এ সমাজে অনেক অমুসলিমও আছে। মুসলমানদের মধ্যে যারা পর্দা করবে না তাদের আমরা বুঝাব। এ সময় দেশের সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে দেশের সব মানুষকে সমান অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন জামায়াতের আমির।
পথসভায় জামায়াতের মিঠাপুকুর উপজেলা রংপুর জেলা ও মহানগরীর নেতারা বক্তব্য রাখেন।