বাকির লাখ লাখ টাকা তুলতে না পেরে হাউমাউ করে কাঁদছেন শফিকুল ইসলাম শফি। ৪৬ বছর বয়সী শফিককে সবাই শফি ভাই বলে ডাকেন। ১৬ বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন চালিয়েছেন তিনি।
এ সময় তার ক্যান্টিনে সকাল, দুপুর ও রাতে আহার করিয়েছিলেন শত শত শিক্ষার্থীকে। আর্থিক সমস্যার কারণে তার ক্যান্টিনে বছরের পর বছর ধরে বাকি খেয়ে টাকার অংক খাতায় লিখে রাখতেন শিক্ষার্থীরা এক এক করে খাতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ টি আর বাকি পরে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। বারবার টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ২০১৬ সালে ১০টি খাতা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
এখনো তার কাছে আছে পাঁচটি খাতা। লেখাপড়া জানে এমন কাউকে পেলে খাতাগুলো দেখিয়ে জানতে চান কত টাকা বাকি আছে তার হিসাব। মাঝেমধ্যে টাকা পরিশোধের জন্য কল দেন মুঠোফোন নম্বরে। কেউ কেউ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলেও আবার কেউ ফোন ধরেন না।
কান্না জড়িত কন্ঠে শফি ভাই বলেন, তার ক্যান্টিনে বাকি খাওয়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আমার কান্নার কথা যদি কেউ শুনে তাহলে বলবে শফি ভাই কাঁদছে! শফি ভাই তো কান্নার লোক না। সে তো হাঁসার লোক, মানুষ কান্না করলে হাঁসায় সে।এই কষ্টটা আমি শুধু জানাতে চাই আমি খুব অসহায় আমাকে আপনারা দেখেন।
শফি বলেন, আমি খুব অসহায় হয়ে গেছি। এরকম অসহায় আমি কখনো ছিলাম না। ১৬ বছর ধরে আমি অনেক শিক্ষার্থীদের সাথে মিলেমিশে ছিলাম। সাংবাদিকদের সাথে বৈঠকও করেছিলাম। কোন সাংবাদিক আমাকে অসম্মান করেনি। আজ আমি খেতে পারছি না। খাবার পাচ্ছিনা, এত অভাব! আমার টাকা-পয়সা নাই। আমার কোথাও কিছু নেই সব আমি স্টুডেন্টদেরকে দিয়ে দিয়েছি।
রাজশাহী মহানগরীর মির্জাপুর এলাকায় স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে এক রুমের একটি ছোট বাসায় থাকেন শফিকুল ইসলাম শফি।কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা থেকে ১৯৭৮ সালে মা-বাবার সাথে রাজশাহীতে আসেন তিনি। বাবা, শহীদ শামসুজ্জোহা হলের কর্মচারী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বিশ্ববিদ্যালযয়ের হলের ক্যান্টিনে কাজ করতেন শফি। তবে ২০০৮ সাল থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব পান।
সাইদ