সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস বিবৃতি দিয়ে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাত ১০টার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
ঘটনার পর থেকে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা নিরাপত্তার জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে ফেনী শহরে ছেলের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে আবদুল হাই কানু অবশেষে মুখ খুলেছেন।
তিনি বলেন, “আমাকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলার জন্য লুঙ্গি ধরে টানাটানি করা হয়েছে। আমার সঙ্গে যা করা হয়েছে, তা দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার শামিল। এ ঘটনার ন্যায়বিচার আমি সরকার ও জাতির কাছে দাবি করছি।”
নিজের ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনাটি বর্ণনা করতে গিয়ে কানু বলেন, “আমি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থবোধ করছিলাম। তাই বাজারে গিয়ে ফার্মাসিতে বসে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ পরীক্ষা করছিলাম। এমন সময় আবুল হাশেম মজুমদার মোটরসাইকেল থেকে নেমে আমার গলা ধরে টেনে নেয়। সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে, ‘তোরে আজ শিক্ষা দিমু। এলাকা থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা।’ এরপর আমাকে টেনে নিয়ে কুলিয়ারা স্কুল মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “হাশেম আমাকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলে। না দিলে টুকরো টুকরো করে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি ছুরি দিয়ে ভয় দেখায়। আমাকে পানিতে চুবানোরও হুমকি দেওয়া হয় এবং গলায় জুতার মালা পরানো হয়। কেন এই বয়সে আমাকে এভাবে লাঞ্ছিত করা হলো, তার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।”
বিচারের দাবি জানিয়ে আবদুল হাই কানু বলেন, “সরকার যদি ভালো মানুষদের সুরক্ষা দিতে না পারে, তবে আমরা কোথায় দাঁড়াব? লুটতরাজ ও অন্যায়কারীদের বিচার চাই। এ ঘটনা শুধু আমার জন্য নয়, সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য অপমানজনক।”
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা এলাকার বাসিন্দা। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে দীর্ঘ ৮ বছর তিনি এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন, যা সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের ফলস্বরূপ।
এ মর্মান্তিক ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে পুরো দেশ।
রাজু