ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নির্যাতন, গভীর রাতে মিছিল নিয়ে থানায় ছাত্রীরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজশাহীতে ছাত্রীনিবাসে নির্যাতন, গভীর রাতে মিছিল নিয়ে থানায় ছাত্রীরা

ছাত্রী নিবাস

রাজশাহীর একটি ছাত্রীনিবাসে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা গভীর রাতে একযোগে ছাত্রীনিবাস থেকে বের হয়ে থানায় গেছেন। মিছিল থেকে তাঁরা বিচার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। থানায় গিয়ে ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ছাত্রীনিবাসের মালিকসহ চারজনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁদের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এই ছাত্রীনিবাসটির নাম ‘ঝলক-পলক মেস’। ছাত্রীনিবাসটিতে প্রায় ৩০০ ছাত্রী থাকেন। গতকাল রবিবার বেলা ১১টার দিকে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করার জের ধরেই ঘটনার সূত্রপাত। দিনভর ছাত্রীদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলে তাঁদের অভিযোগ। পরে রাত ১১টার দিকে পুলিশ গিয়ে দুজনকে আটক করে।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রীরা মামলা করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বোয়ালিয়া থানার দিকে রওনা দেন। তখন ছাত্রীরা জানান, তাঁদের বেশির ভাগ ছাত্রীই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতির জন্য এই ছাত্রীনিবাসে আছেন। এই ছাত্রীনিবাসে টাকা বেশি নেওয়া হলেও খাবারের মান খুবই খারাপ। গতকাল সকালে নিম্নমানের খিচুড়ি পরিবেশনের প্রতিবাদ করেন এক ছাত্রী। তিনি এই ছাত্রীনিবাসে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ সময় মালিকপক্ষ ওই ছাত্রীকে জানায়, ছাত্রীনিবাসে ওঠার সময় তিনি যে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন সেখানে আছে যে সাত মাসের আগে ছাত্রীনিবাস ছাড়া যাবে না। ওই ছাত্রী চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে মালিক জানান, আইনজীবী ছাড়া এটা দেখা যাবে না।

ছাত্রীরা আরও জানান, নিজের স্বাক্ষর করা চুক্তিপত্র দেখতে আইনজীবী লাগবে কেন, এমন প্রশ্ন তুললে ছাত্রীনিবাসের মালিক ওই ছাত্রীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। মালিকের দুই ছেলে ঝলক ও পলক এসে ওই ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এতে অন্য ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ঝলক ও পলক তাঁর বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে ছাত্রীদের হুমকি দেন যে তাঁরা তাঁদের রাজশাহীতেই থাকতে দেবেন না।

ছাত্রীদের অভিযোগ, সকালের ওই ঘটনার পর মালিকপক্ষ দিনভর তাঁদের ছাত্রীনিবাসে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাঁদের বলা হয়, রাতে ফটকের তালা খুলে দেওয়া হবে। তখন সবাইকে একযোগে ছাত্রীনিবাস ছাড়তে হবে। তখন ছাত্রীরা ফোন করে তাঁদের বন্ধুদের সহযোগিতা চান। এরপর রাত ১১টার দিকে ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী গিয়ে ছাত্রীনিবাসের তালা ভেঙে ছাত্রীদের বের করেন। খবর পেয়ে সেখানে যান নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ। তিনি ছাত্রীনিবাস থেকে দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। এ সময় তিনি মামলা করার জন্য ভুক্তভোগী ছাত্রীদের থানায় ডেকে আসেন। পরে রাত ১২টার দিকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে থানায় যান। ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করার পর রাত ২টার দিকে তাঁরা থানা থেকে বের হন।

বোয়ালিয়া থানার থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘আমি খবর পেয়েই সেখানে গিয়ে দুজনকে আটক করি। তাদের নিয়ে আসার সময় ছাত্রীদের বলি মামলা করার জন্য যেন তাঁরা চলে আসেন। তাঁরা যখন আসছিলেন, তখন অভিযান চালিয়ে আরও একজনকে আটক করা হয়। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। তিনজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’

ওসি জানান, সোমবার গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজন আসামি আছে। তাদেরও শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

রাতে বোয়ালিয়া থানায় ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছাত্রীনিবাসটিতে মালিক ও মালিকের ছেলেরা এক ছাত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন, শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছেন। খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে যায় এবং তিনজনকে হেফাজতে নেয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে অনেক মেস। এটা আমাদের মাথাতেই আসেনি যে স্টুডেন্টরাও এ রকম থ্রেটের মুখে থাকে। এটা এখন আমাদের নলেজের মধ্যে আসল। আমরা সজাগ থাকব। কেউ এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হলে ৯৯৯ বা থানায় ফোন করলে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’

শহীদ

×