ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

দাবি মির্জা ফখরুলের

বিএনপির দীর্ঘ আন্দোলন ও ত্যাগেই শেখ হাসিনার পতন সম্ভব হয়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিএনপির দীর্ঘ আন্দোলন ও ত্যাগেই শেখ হাসিনার পতন সম্ভব হয়েছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির দীর্ঘ সময়ের রাজপথের আন্দোলন ও ত্যাগেই শেখ হাসিনার পতন সম্ভব হয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, বিএনপি ১৫ বছর লড়াই করেছে বলেই  ছাত্র-জনতা হাসিনাকে বিদায় দিতে পেরেছে। ছাত্র-জনতা সাহস করে দাঁড়িয়েছিল বলে তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে বিএনপির ত্যাগ নির্যাতন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।
তিনি সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে সদর থানা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় এ দাবির কথা জানান।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে। একটা মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। এখানে নাকি আমাদের হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আমরা খুব শান্তি প্রিয় মানুষ। আমরা সব সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলমান একসঙ্গে বসবাস করি। বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। এ অবস্থায় সকল ষড়যন্ত্র উগ্রবাদ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা ও প্রতিহত করতে হবে। 
তিনি ভোটের অধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, নিজের অধিকার আদায়ে সবাইকে ৫ আগস্টের মতো আবারও রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।  
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি ‘ভোট চাইতে আসি নাই। দেশ, মাটি, মানুষের জন্য প্রয়োজন হলে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ মুজিব ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোট দেওয়ার জন্য, ভালো থাকার জন্য, কম দামে খাওয়ার জন্য, মা-বোনদের কাপড়ের জন্য, ভালো অর্থনীতি চেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মানুষ আশা করেছিল শেখ মুজিব বড় নেতা, তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু দেশের মানুষ শান্তি পায়নি। যে দলটাকে সাধারণ মানুষ ভালোবাসত, কিন্তু তারাই জনগণের ওপর চড়াও হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের পর। তাদের দুর্নীতি, নির্যাতন, খুন-গুমের কারণে অনেকেই আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিল আওয়ামী লীগ। শিয়ালকে যদি মুরগির খাঁচায় ঢোকানো হয় তা হলে কী হবে, ঠিক সে রকমই করে নিজেরা ঢুকে ভোট দিয়ে দিত, জনগণকে ভোট দিতে দিত না। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িকতা নেই। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। কৃষক, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা হবে। আর গায়েবি মামলা হবে না।
দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এ সময় তিনি দায়িত্বশীলদের আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেকে যারা দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন, তাদের উল্টাপাল্টা কথা বন্ধ করতে হবে। দায়িত্বশীল জায়গায় বসে ভুল কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। দেশের মানুষ অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে এবার শান্তি চায়। মানুষ নির্বাচন চায়, যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চায়। 
সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওবায়দল্লাহ মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী, বিএনপি  নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম, তারিক আদনান ও তুহিন বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেছেন, ‘আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি। এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাই। আসুন সবাই সমস্ত বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, জনগণকে বোকা বানিয়ে তিনটা নির্বাচন করে জোর করে ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি ভেবেছিলেন, কোনো দিন ক্ষমতা থেকে যাবে না। কিন্তু দেখেন, কীভাবে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে পরিবারের সবাইকে নিয়ে হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘যেই নেত্রী বলেছিলেন আমি পালাই না, আমি ভয় পাই না, আমি মুজিবের বেটি, আমি পালাই না। শেষ পরিণতি কি হলো।
দলের সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে ‘ভিশন বাংলাদেশ টুয়েন্টি-থার্টি’ দিয়েছিলেন। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফা কী, সংস্কার প্রস্তাব। এই সংস্কারটা আমরা চাই। এই সংস্কার বলতে বুঝি, আমরা যেন ভোটটা দিতে পারি, আমাদের দেশে যেন শান্তিতে থাকতে পারি, জিনিসপত্রের দাম যেন কম হয়, মারামারি যেন না হয়, চুরি-ডাকাতি যেন না হয়। আর কথায় কথায় ঘুষ যেন দিতে না হয়। এ রকম একটা বাংলাদেশ আমরা চাইছি।

×