ক্রিসমাসে ঘর সাজানোর নানা উপকরণ বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে তোলা
ক্রিসমাসের সময়টা কী যে বর্ণিল হয়ে ওঠে! দুনিয়াজুড়েই চলে উৎসবের প্রস্তুতি। শুধু প্রস্তুতি বললে ভুল হবে। ম্যারাথন প্রস্তুতি! ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে অক্টোবরেই ক্রিসমাসের সাজ-সজ্জা শুরু হয়ে যায়। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রাস্তাঘাট শপিংমল রেস্তোরাঁ বাসা বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানÑ কোনদিকে তাকাবেন? ক্রিসমাস ট্রি আর সান্তাক্লজকেই দেখতে পাবেন শুধু। আরও কত রকম সাজ-সজ্জা!
বিশেষ করে ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয় এ সময়। ফলে যারপরনাই বর্ণিল হয়ে ওঠে উৎসবটি। পর্যটন-বান্ধব দেশগুলোতে আলাদা মাত্রা পায় ক্রিসমাস। আর বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ। ফলে ক্রিসমাস ঘিরেও উচ্ছ্বাসের কমতি থাকে না। আগামীকাল বুধবার ২৫ ডিসেম্বর। এদিন পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্রিসমাস বা বড়দিন উদ্যাপন করা হবে।
ঢাকার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের অনেকেরই ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে গেছে ক্রিসমাস ট্রি। চলছে সাজ সজ্জার কাজ। থেমে নেই অন্যান্য কেনাকাটাও। বড় বড় শপিংমল ও বিপণিবিতানে ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন বিদেশী ব্র্যান্ডের শোরুমে সান্তাক্লজ ও তার বল্গা হরিণের ডিসপ্লে চোখে পড়ছে।
ঢাকার চার্চগুলোতেও চলছে ধুয়া-মোছার কাজ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে চারপাশ। আশপাশের এলাকাগুলোতে ক্রিসমাস উপলক্ষে ঘর সাজানোর নানা উপকরণ বিক্রি করা হচ্ছে। তেজগাঁও, মনিপুরিপাড়া, ফার্মগেট এলাকায় খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বসবাস খুব চোখে পড়ে। একই কারণে এসব এলাকায় সাজসাজ রব। বাইরে থেকেই বোঝা যাচ্ছে ঘরের ভেতরে প্রাক উৎসব শুরু হয়ে গেছে।
মনিপুরীপাড়ার ৫ নম্বর গেট সংলগ্ন একটি বাসার নিচে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল প্যাট্রিক রোজারিওর সঙ্গে। স্থানীয় এক তরুণ বলছিলেন, নভেম্বর থেকে ক্রিসমাসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। বাসার ভেতরে প্রায় পুরোটাই এখন আলো ঝলমলে। একাধিক ক্রিসমাস ট্রি বাইরে স্থাপন করেছেন। এখন শুধু উৎসব শুরুর অপেক্ষা বলে জানান তিনি।
একই এলাকার বাসিন্দা সাংস্কৃতিক সংগঠক মানজার চৌধুরী। তার বাসার সামনে বেশ লম্বা একটি ক্রিসমাস ট্রি আগে থেকেই ছিল। এই গাছে আলোকসজ্জা করেছেন তিনি। তার বক্তব্য: ধর্ম যার যার/উৎসব সবার। বাঙালির বিশ্বাসের প্রতিফলন গাছটিতে ঘটানো হয়েছে, বলতে পারেন।
মার্কেট শপিংমলে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। নতুন পোশাক কেনায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন অনেকে। বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে কথা হচ্ছিল আদ্রিতা গোমেজের সঙ্গে। পরিবারের অন্য দুই সদস্যের সঙ্গে এসেছিলেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে জানালেন, এবার দেশের সার্বিক অবস্থা দেখে তারা কিছুটা উদ্বিগ্ন। কেনাকাটায় এর প্রভাব পড়েছে। একটু দেরি করে শুরু করেছেন। তবে ক্রিসমাসের আগেই শেষ হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
ক্রিসমাসের বর্ণিল রূপ আরও আগে থেকে ধরা দিচ্ছে রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে। এসব হোটেলে বিদেশী অতিথি বেশি থাকেন। তাদের কথা বিবেচনায় রেখেও বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজন উপভোগ করবেন রাজধানীবাসীও। সোমবার প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগঁাঁওয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রাক উৎসব শুরু হয়ে গেছে। হোটেলের লবিতে অসংখ্য মরিচবাতি দিয়ে সাজানো চমৎকার ক্রিসমাস ট্রি। মেঝেতে সান্তাক্লজের গিফটবক্স। লবি ধরে এগিয়ে গেলে ছোট বড় আরও কয়েকটি ক্রিসমাস ট্রি চোখে পড়ে। হোটেলের টেরাকোটা কর্নারে বড়দিনের আকর্ষণীয় ডিসপ্লে।
এখানে তুষারাবৃত ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, বলগা হরিণ সব কিছুর চমৎকার উপস্থাপনা। অবশ্য বড়দিনের মূল আয়োজনটি থাকছে হোটেলের পুলসাইডে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উৎসব মঞ্চে থাকবে আকর্ষণীয় সব পরিবেশনা। শিশুদের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় ম্যাজিক শো, মাইকেল জ্যাকসন শো। কিছু রাইডেও চড়তে পারবে তারা। ঘোড়ার গাড়িতে যেমন চড়া যাবে, তেমনি থাকবে মিনি ট্রেনে চড়ে বড়দিন উপভোগের সুযোগ। প্লেস্টেশন ভিআর গেমসের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আর বর্তমানে হোটেলের লবিতে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ক্রিসমাস কেক ও কুকিজ। ক্রিসমাসের দিন আরও অনেক ধরনের খাবারের অফার থাকবে বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেও চলছে উৎসব প্রস্তুতি। হোটেলের প্রায় পুরোটাজুড়েই বড়দিনের আকর্ষণীয় ডিসপ্লে। ২৫ ডিসেম্বর সামনে রেখে হোটেলকে বিশেষভাবে সাজানো হয়েছে। ক্রিসমাসের দিন নানা আয়োজনে মুখর থাকবে হোটেলের লবি ও রেঁস্তোরা। ছোটদের জন্য থাকবে কিডস কার্নিভ্যাল। উইন্টার গার্ডেনে আয়োজন করা হবে ক্রিসমাস কিডস ওয়ান্ডারল্যান্ড। চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা। এখানে থাকবে ফান রাইডস, বাবল হাউস, ম্যাজিক, চ্যু চ্যু ট্রেন, ম্যারি গো রাউন্ড, বাউন্সি ক্যাসেলসহ বিচিত্র আয়োজন। থাকবে বড়দিনের বিশেষ খাবারও।
রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনেও এখন বড়দিনের আমেজ। হোটেলের দ্বিতীয় তলার লবিতে বিশালাকার ক্রিসমাস ট্রি স্থাপন করা হয়েছিল অনেক আগেই। মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে বলগা হরিণ। বিক্রি করা হচ্ছে বড়দিনের বিশেষ কেক ও কুকিজ। হোটেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্রিসমাসের দিন ওয়াটার গার্ডেন ট্যারেসে আয়োজন করা হবে ‘জিঙ্গেল অ্যান্ড জয় কিডস’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। কিডস অ্যামুজমেন্ট গেমস, প্লে উইথ ক্লাউন ইত্যাদি আকর্ষণীয় নামের আয়োজনে যোগ দিতে পারবে শিশুরা। সব মিলিয়ে চমৎকার প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি পূর্ণতা পাবে ক্রিসমাসের দিন- আমাদের তা-ই আশা।